জন্মনিবন্ধনে সংশোধন, ঘুষ না দিলে কাজই হচ্ছে না চুয়াডাঙ্গার কোনো পৌরসভায়। তার ওপর আফরোজা পারভীন নামে সদর পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজারের হাতে লোপাট হয়ে গেছে জন্মনিবন্ধনের প্রায় ৮ লাখ টাকা! হিসাব চেয়েছে জেলা প্রশাসন, কিন্তু তার আগেই সরিয়ে ফেলা হয় তাকে। ‘মৌখিক অ্যাকশন’ এ দায় সেরেছেন মেয়র। ওদিকে, নিবন্ধন শাখার সার্ভার আইডি এখনও চলছে আফরোজার নাম আর পাসওয়ার্ডে। অনুসন্ধানে বেরিয়েছে, রেজিস্ট্রারে সরকারি টাকার কোনো হিসেবই রাখতো না পৌরসভা।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর পৌরসভা। জন্মসনদে ছেলের নামের একটি বর্ণ সংশোধন করতে গিয়েছেন এক দম্পতি। বলা হলো, ছেলে যখন ক্লাস ফাইভ পাস করবে তখনই করা যাবে নাম সংশোধন। এছাড়া, আবেদন করেও মাসের পর মাস ঘুরছেন আরেকজন। আবার, কেউ কেউ সন্তানের নাম সংশোধন করতে এসে দেখেন, তার নিজের নামেই ভুল।
জন্মনিবন্ধনের ৮ লাখ টাকা গেল কোথায়? রেজিস্ট্রারের হিসেবই রাখে না পৌরসভা!
এমনিতেই জন্মনিবন্ধন বা এর সংশোধন মানেই ভোগান্তি, তার ওপর চুয়াডাঙ্গার সদর পৌরসভা ঘটিয়েছে আরেক কাণ্ড! প্রতি আবেদনে নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা, যার ৫০ টাকা জমা হওয়ার কথা সরকারি কোষাগারে। অথচ জন্মনিবন্ধন বাবদ ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকার হিসেবই গায়েব করে ফেলেছে এ পৌরসভা। তাহলে কোথায় গেলো সরকারের এ টাকা?
চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার আফরোজা পারভীন বললেন,
সেসময় জন্মনিবন্ধন শাখার দ্বয়িত্বে ছিলেন আফরোজা পারভীন। সরকারি টাকা লোপাটের অভিযোগের পরও বহাল তবিয়্যতে তিনি। কথায় কথায় জানালেন, এ কাজে তিনি একা নন।
আফরোজা পারভীন আরও বলেন, ফাইল লোড দিলে মেয়র সিগনেচার করবে, সচিব সিগনেচার করবে তারপর টাকা উঠবে। আমি কী টাকার মালিক? এক টাকাও তো আর হাতে ওঠে না। আমি পেপার্স দেবো আপনাকে। মেয়র মহোদয় মুখে বলে আমার ওপর চাপিয়ে দিলে তো আর হবে না।
এদিকে, হিসেব চেয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর অন্যদিকে, মৌখিকভাবে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন মেয়র।
সদর উপজেলার পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, কারো যদি ঘাটতি থাকে, ঘাটতিগুলো কভার করে ফেলি। নোটিশ করেছি, ডেকে মুখে বলে দিয়েছি।
এরইমধ্যে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। যার প্রধান পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা। তার কাছে জিজ্ঞাসা, এমন অভিযোগ আর বিভাগ বদলের পরও জন্মনিবন্ধন সার্ভারের আইডি পাসওয়ার্ড এখনও কি করে আফরোজার কাছে? আদৌ কি তহবিলে আছে সে টাকা?
চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম জানালেন, ব্যালেন্সটা তো এই মুহূর্তে আর আমি জানি না। বকেয়াটা পরিশোধ না হলে তো আর নামটা চেঞ্জ হবে না। হ্যান্ডেলিংটা শুধু চেঞ্জ হবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে তদন্তকার্য দেখভাল করছেন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী। জানালেন, পাওয়া গেছে আফরোজাসহ গোটা পৌরসভার নানান অনিয়ম।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া বলেন, আমি এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে এটা নিঃসন্দেহে জঘন্যতম কাজ হয়েছে। সরকারি তহবিল তসরুফ করার সামিল। মাসিক যে রিপোর্টটি দেয়ার কথা ছিল সেটি যথাযথ ছিল না। এবং আমরা আরও একটা লক্ষণ পেয়েছি যে, টাকার যে ইনকামিং ও আউটগোইং তার একটা রেজিস্ট্রার থাকে; যাকে আমরা বলি ক্যাশ রেজিস্ট্রার। ক্যাশ রেজিস্ট্রারটা আসলে আপ টু ডেট ছিল না।
শুধু এই ৫০ টাকার সরকারি ফি’র হিসাব নয়, সনদ প্রতি অতিরিক্ত ১শ থেকে দেড়শ টাকার হিসেব দিতে পারেনি কোনো পৌর কর্তৃপক্ষ।
/এসএইচ
Leave a reply