কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
এ নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রতি চার মাস পর পর খোলা হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স হিসাবে ব্যবহৃত সিন্দুক গুলো। আর বরাববই এসব দানবাক্সে মেলে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা ও বিপুল স্বর্ণালঙ্কার। তবে এবার ৮৯ দিন পর দানবাক্স খোলে মিললো ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা ও আড়াইশ’ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার।
শনিবার পাগলা মসজিদের পাঁচটি দানবক্স খোলে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। আর এ টাকা গণনায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যাংক কর্মকর্তা, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মাঝ পথে অবস্থিত এই মসজিদ। জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল ওই স্থানটিতে। মুসলিম, হিন্দু নির্বিশেষে সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই পাগল সাধকের আস্তানায়। ওই সাধকের মৃত্যুর পর তার উপসানালয়টিকে কামেল পীরের মসজিদ হিসাবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। তারপর থেকেই হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন জাতি-ধর্মের লোকজন তাদের মনের বাসনা পূরণের জন্য এ মসজিদে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, গাছের ফল-ফলাদি নিয়ে আসে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ’ বছরের বলে জানা যায়।
শহরের প্রবীণ লোকজনের মতে, আধ্যাত্মিক পাগলের নামে গড়ে উঠা এ প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদটি হিন্দু-মুসলিম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার স্থান হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেছে। লোকজনের ধারণা যে এ মসজিদে দান-খয়রাত কিংবা মানত করলে দুঃখ-দুর্দশা দূর ও মনের বাসনা পূরণ হয়। আর এ জন্যই নারী-পুরুষগণ নগদ টাকার পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত দান করেন।
এ মসজিদের দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদটির আধুনিকায়তন কাজের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ এবং দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা, লেখাপড়া, বিবাহ ইত্যাদি সমাজ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।
Leave a reply