জন্মের সময় থেকেই পা ছিল না মায়া মেরহির। কিন্তু অন্যদের মতো হাঁটতে খুব ইচ্ছা হতো তার। একটু বড় হওয়ার পর বাবাকে বলতো তার ইচ্ছার কথা। অসহায় বাবা মোহাম্মদ মেরিহর কীইবা করার আছে? উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে মেয়ের জন্য কৃত্রিম পা জোগাড় করে দিতে পারবেন না তিনি। আসলে তার নিজেরও জন্মগতভাবে পা নেই।
নিজে নিজেই চেষ্টা করলেন শিশু মেয়েটির ইচ্ছা পূরণ করা যায় কিনা। এক পর্যায়ে মেধা খাটিয়ে কোমল পানীয়র দুটি ক্যান এমনভাবে তৈরি করলেন যাতে মায়া সেগুলো তার কোমরের নিচে লাগিয়ে হাঁটতে পারে। মোহাম্মদের চেষ্টা সফল হলো। হাঁটতে শুরু করলো মায়া।
কোমল পানীয়ের ক্যানের সহায়তায় ৮ বছর বয়সী শিশুর হাঁটার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সেটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশিদের কাছেও পৌঁছায়। ছবিটি দেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় শিশুটির পরিবারকে তুরস্কে ডেকে নেয় সে দেশের সরকার ও রেডক্রিসেন্টের তুর্কি শাখা। সেখানে তুর্কি চিকিৎসক ডাক্তার মেহমেত জাকি জুলজু অপারেশনের মাধ্যমে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেন।
ডাক্তাররা আশা করছেন, তিন মাসের মধ্যে মেরহি তার নতুন কৃত্রিম পা লাগিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে। তারা আরও বলেন, তার বাবার স্থির সংকল্পের কারণে তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে গিয়েছে।
‘তিনি এই বাচ্চাটাকে হাঁটানোর জন্য সব কিছু করেছেন এবং আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করুন’ বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেহমেত জাকি। ‘সাধারণত কেউ বিশ্বাস করত না যে, কাজ চালানোর জন্য তৈরি ওই নকল পা লাগিয়ে হাঁটা সম্ভব’ যোগ করেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিশেষভাবে তৈরি কৃত্রিম পা দেয়া হয়েছে মেরহিকে। এখন ছোট ছোট পা ফেলে ইস্তাম্বুলে হাঁটছে সে।
সিরিয়ার আলেপ্পোতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি তার স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব অঞ্চলে আশ্রয় নেন মোহাম্মদ মেরহি।
তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের, বিশেষ করে যেখানে থাকতাম সেখান থেকে তাঁবুতে আসা… পুরো অবস্থাটাই খুব কঠিন ছিল।’
সিরিয়ার যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ঘর হারিয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ। এদের অর্ধেক এখনও সিরিয়ায় রয়েছে এবং বাকি অর্ধেক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আছে। তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে ৩৫ লাখ মানুষ।
Leave a reply