মাঠ থেকে দেশের শাসন; ‘উইয়াহ’ পিতা-পুত্রের সাতকাহন

|

প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়াহ, টিম উইয়াহ ও ফার্স্ট লেডি ক্লার উইয়াহ।

কাতার বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গোল করা টিমোথি উইয়াহকে অনেকদিন মনে রাখবেন দলটির ভক্তরা। ওই ম্যাচের ৮২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেল গোল করে সমতা না ফেরালে হয়তো টিমোথিই হতেন সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের নায়ক। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ ইংল্যান্ডের সাথে গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন, আল বাইতের গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়াহ। পাঠক নিশ্চয়ই এতোক্ষণে বুঝতে পারছেন কী বলা হচ্ছে?

ঠিক ধরেছেন। বলছিলাম, ১৯৯৫ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহর কথা। আল বাইত স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বেশকবার ক্যামেরায় ধরা পড়েন জর্জ উইয়াহ। সে সময় ধারাভাষ্যকারও মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন জর্জের ফুটবল লিগেসির কথা।

টিমোথির জন্ম যুক্তরাষ্টের ব্রুকলিনে; তারিখটা ২০০০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। টিমোথির বাবা জর্জ উইয়াহ লাইবেরিয়া জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট। আর তার মা লাইবেরিয়ার বর্তমান ফার্স্ট লেডি ক্লারের জন্ম জ্যামাইকায়।

টিমোথি উইঙ্গার হিসেবে খেলেন যুক্তরাষ্টের জাতীয় ফুটবল দল ও লিগ ওয়ানের দল লিলেতে। টিমোথির ফুটবলের হাতেখড়িটা বাবা জর্জের মাধ্যমে হলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্লাবের জুনিয়র দলে ছিলেন নিয়মিত মুখ। ২০১৭-তে তিনি নাম লেখান ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে; যেখানে ৯০’র দশকে তারা বাবা জর্জও খেলতেন। ২০১৮ সালে ছয় মাসের জন্য লোনে টিমোথি খেলতে যান স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকে। এরপর, ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে লিলেতে যোগ দেন টিমোথি।

জাতীয় দলে খেলার প্রসঙ্গ যখন আসে তখন টিমোথির সুযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জ্যামাইকা, লাইবেরিয়া কিংবা ফ্রান্সের জার্সি গায়ে জড়ানোর। বাবা লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেও টিমোথি সিদ্ধান্ত নেন জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার। আর এজন্য তিনি বেশ কয়েকবার প্রত্যাখান করেছেন ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের প্রস্তাব। অবশ্য ২০১৪ সাল থেকেই যুক্তরাষ্টের জুনিয়র দলগুলোতে খেলতেন টিমোথি।

২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন টিমোথি। এ পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ২৬ ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেছেন মাত্র চারটি। সর্বশেষ ৮ ম্যাচে পেয়েছেন ২ গোল, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিরুদ্ধে করা গোলটি।

এবার বলি, টিমোথির বাবা প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়াহকে নিয়ে। ‘উইয়াহ’ ফুটবল বা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মোটেও পরিচিত কোনো লাস্ট নেম না। কিন্তু, এই ‘অপরিচিত উইয়াহ’রা লাইবেরিয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

ড্রিবলিং, ফিনিশিং, অ্যাক্সিলারেশন আর স্কোরিংয়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা জর্জ উইয়াহ ইউরোপে ফুটবল খেলতে শুরু করেন বিখ্যাত কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের মাধ্যমে। সালটা ১৯৮৮। তখন তিনি খেলতেন মোনাকোর হয়ে। স্ট্রাইকার হিসেবে মোনাকোতে দারুণ চারটি মৌসুম কাটিয়ে ১৯৯২ সালে তিনি নাম লেখান পিএসজিতে। সে বছর পিএসজির হয়ে লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন জর্জ। এর স্বীকৃতি স্বরূপ লাইবেরিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৯৫ সালে তিনি জেতেন ব্যালন ডি’অর। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতা হয়নি তার।

১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে আফ্রিকা অঞ্চলের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন উইয়াহ। আর, ১৯৯৬ সালে স্বীকৃত হন ‘শতাব্দীর সেরা আফ্রিকান ফুটবলার’ হিসেবে।

১৯৯৫ সালে জর্জ যোগ দেন ইতালিয়ান জায়ান্ট এসি মিলানে। সেখানে দারুণ চারটি মৌসুম কাটানোর পাশাপাশি দুবার জয় করেন লিগ শিরোপা। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে প্রিমিয়ার লিগে চেলসি আর ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেন জর্জ। মাঝে কিছুদিন ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্সেইয়ের হয়েও খেলেন তিনি। আর ২০০৩ সালে তিনি অবসর নেন আরব আমিরাতের ক্লাব আল জাজিরার হয়ে।

লাইবেরিয়া জাতীয় দলের হয়ে জর্জ উইয়াহ ৭৫টি ম্যাচ খেলে দিয়েছেন ১৮টি গোল।

ফুটবল থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দেন জর্জ। ২০০৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েন নিজের গঠিত রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জের হয়ে; কিন্তু ব্যর্থ হন। ২০১১ সালের নির্বাচনেও ব্যর্থ উইয়াহ শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে লাইবেরিয়ার সংসদ সদস্য হতে পেরেছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০১৭ সালের নির্বাচনে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply