মেসি নামের মহানায়করা বুঝি এমনই হয়

|

ছবি: সংগৃহীত

রিফাত এমিল:

নায়করা এমনই হয়। হতে হয়। নায়করা সব পারেন। শেষ পর্যন্ত সব সমাধানই বুঝি দিয়ে দেন। রোজারিওর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি যেনো ঠিক তাই। সব পারেন, অন্তত এমন দিনে তাও প্রমাণ হয়ে যায়।

হারলেই শেষ। ড্র করে বাঁচা? সে রক্ষাও নেই। মিলে যাবে নানান ‘যদি, কিন্তু, তবে’ এর হিসেব। আগের ম্যাচটাই সৌদি আরবের সাথে হারের করুণ সুর বেজে গেছে লিও মেসির মনে। রোববার লুসাইলে যখন নামছেন সমীকরণ একটাই, জিততে হবে। লুসাইলের প্রায় ৯০ হাজার দর্শকের চিৎকার যেনো পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির মেসিকেও সে সব আরও বেশি করে মনে করাচ্ছে।

শুধু ৯০ হাজার? গণ্ডিটা একটু ছোট হয়ে গেলো কিনা? পুরো দুনিয়ায় যেখানে যতো আলবিসেলেস্তে ফ্যান, সবার চোখ জোড়া যেনো মেসির দিকেই। এমন ম্যাচ, মেসি ছাড়া আর কে জেতাবেন? ত্রাণকর্তা? ফুটবল মাঠে তো এক এলএমটেনই!

সৌদি আরবের সাথে যদি নিজেদের খুঁজে না পাওয়া হয়, তবে মেক্সিকোর সাথে প্রথমার্ধকেও বলা যায় পুরোপুরিই ছন্নছাড়া। যেনো কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না! গোল, সে তো বহু দূরের মরীচিকা!

যেদিন কিছুই হয় না, সেদিন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা লাগে। সেদিনই হাজির হয়ে যায় নায়ক। এমন সব ম্যাচে যেনো মেসিরা জানিয়ে দেন, কেন সহস্র-লক্ষ-কোটি চোখ শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকেই। পঁচিশ গজ দূর থেকে যে শট নিলেন তার একটাই উত্তর, গোল। কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে আসা পিটার ড্রুরি যেনো থামতেই চাইলেন না। জানিয়েন দিলেন, ম্যাজিক ম্যান মেসি! সত্যিই তো, এই মানুষটা জাদুকরের চেয়ে কম কীসে?

মেক্সিকো ততক্ষণে বুঝে গেলো, এই মেসিকে ‘অল্প’ একটু জায়গা ছেড়ে নিজেদের কত ‘বড়’ ক্ষতি করে ফেলল দলটা!

অতি অসাধারণ যারা তাদের এই এক মধুর সমস্যা। মাঠে নামলেও যেনো রেকর্ড। মেসিরও হলো তাই। মাঠে নামতেই স্পর্শ করলেন ডিয়াগো ম্যারাডোনাকে৷ যিনি এমন এক নভেম্বরকে মন খারাপের রাত বানিয়ে স্মৃতি হয়েছিলেন দু’বছর আগে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা মেসি-ম্যারাডোনা দু’জনই এখন সমানে সমান। ম্যাচ সংখ্যা ২১। শুধু ম্যাচ? গোলেও আর কম যাওয়া কীসে! ২১ ম্যাচে দুই আর্জেন্টাইন জাদুকরের গোলসংখ্যাও সমান ৮। সঙ্গে বিখ্যাত দশ নম্বর জার্সিটা পরার পরে এটা মেসির ৮০০ তম ম্যাচও। স্মরণীয় করে রাখলেন সেটাও, সঙ্গে আরেকটা গোলের যোগানও মেসির পায়েই।

মেসি নিয়ে সহস্র প্ল্যাকার্ড, বাণী বিখ্যাত হয়ে আছে ফুটবল দুনিয়ায়। তবে পুরনো এক প্ল্যাকার্ডে ছিল, মেসি তুমি যদি শুধু স্বর্গে খেলো, তা দেখার জন্য আমি এখনই মরে যেতে পারি। তবে এই প্ল্যাকার্ড লেখা মেসি ভক্তকে এমন কিছুই করতে হয়নি। মেসি এখনও এই মর্ত্যেই খেলেন। আর খেলেন বলেই লুসাইলের এমন জাদুকরী রাত বারবার ফিরে আসে।

নায়ক, মেসির জন্য শব্দটা একটু কম পড়ে গেলো? বাংলা ভাষাভাষী মানুষরা মহানায়ক শুনলেই ভেবে নেন, উত্তম কুমার। তবে মেসিও মহানায়কের চেয়ে কম কীসে? ফুটবল মাঠের যাবতীয় সব সমস্যার সমাধান যেনো রোজারিওর ছোট্ট ছেলেটার পায়েই।

একটা ছোট্ট তথ্য সংযুক্ত করা যাক। জার্মান ইঞ্জিন লোথার ম্যাথাউস বিশ্বকাপে খেলেছেন ২৫টা ম্যাচ। মেসি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায় যৌথভাবে তিন নম্বরে। মেসি যদি এই বিশ্বকাপের ফাইনালটা খেলতে পারেন, তবে তিনিই হয়ে যাবেন বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার। ফাইনাল? একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না? হোক না! মেসির নামের মহানায়করা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ির সাহসটুকু দিয়ে দেন যে কাউকে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply