শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

|

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো ম্যাচটি প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই হেলে ছিল বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার অতি মানবীয় বিগ হিটিংয়ে অবিশ্বাস্য জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল ভারত। শেষ বলে দরকার ৬ রান, এমন সমীকরণে মোস্তাফিজ তার অস্ত্রাগার থেকে বের করেন দুর্দান্ত এক ইয়োর্কার। যে বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি রোহিত। আর এর মাধ্যমেই ৫ রানের জয় পেয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে লিটন দাসের বাংলাদেশ।

সিরিজ খোয়ানোর শঙ্কা না থাকলে হয়তো চোট পাওয়া আঙুলে ব্যান্ডেজ নিয়ে আর ব্যাট করতে নামতে হতো না রোহিত শর্মাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪২.৪ ওভারে ২০৭ রানের মাথায় ৭ম উইকেটটি ভারত হারালে, বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ব্যান্ডেজ নিয়েই পরাজয় এড়াতে ব্যাট করতে নেমে পড়েন রোহিত। ব্যাটে নেই রানের প্রবাহ, তার উপর বৃদ্ধাঙ্গুলে চোট। রোহিত খুব বেশি কিছু করতে পারবেন, এমনটি ভাবা মানুষের সংখ্যা হয়তো খুব বেশি ছিল না। তবে ৩ চার ও ৫ ছয়ের সাহায্যে ২৮ বলে ৫১ রান করে ভোজবাজির মতো দৃশ্যপট পাল্টে ফেলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু অন্যপ্রান্তে কোনো ব্যাটারের সহায়তা পাননি তিনি। সেই সাথে, মোস্তাফিজও ফিরে পেয়েছেন তার সেরা অস্ত্র কাটারের অব্যর্থ ব্যবহার। তাই, ভারতের জন্য সিরিজ বাঁচাতে রোহিতের বিধ্বংসী ব্যাটিংও যথেষ্ট হয়নি।

শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২০ রান, হাতে মাত্র এক উইকেট। স্ট্রাইকে থাকা রোহিত শর্মার তাই সব বলকেই সীমানা পাড় করানো ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না। প্রথম বলে মোস্তাফিজের কাটারে পরাস্ত হন রোহিত। কিন্তু পরের দুই বলে দুইটি বাউন্ডারি মেরে ভারতের আশা বাঁচিয়ে রাখেন এই ডানহাতি ব্যাটার। চতুর্থ বল ডট দিয়ে ফিরে আসেন মোস্তাফিজ। ৫ম বলে লফটেড শটে বল সীমানা ছাড়া করেন রোহিত। শেষ বলে তাই ভারতের দরকার ছিল আরও একটি ওভার বাউন্ডারি। কিন্তু মোস্তাফিজের ইয়োর্কারে কিছুই করতে পারেননি রোহিত। আর মিরাজ-মাহমুদউল্লাহদের ম্যাচে পার্শ্বনায়ক হয়ে যান এবাদত-মোস্তাফিজরা।

বাংলাদেশের দেয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ভিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানকে হারিয়ে ফেললে বড়সড় বিপদেই পড়ে সিরিজে পিছিয়ে থাকা রোহিতের দল। ১৯-তম ওভারে দলীয় ৬৫ রানের মাথায় লোকেশ রাহুল ফিরে যান সাজঘরে। আর সেখান থেকেই শুরু শ্রেয়াস আইয়ারের পাল্টা আক্রমণের। বোলিং অলরাউন্ডার আক্সার প্যাটেলকে সাথে নিয়েই পাহাড় অতিক্রমের চেষ্টা চালিয়ে যান এই ডানহাতি ব্যাটার।

মিরাজের বলে আফিফ হোসেনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে শ্রেয়াস খেলেছেন ১০২ বলে ৮২ রানের চমৎকার ইনিংস। এরপর রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ৫৬ বলে ৫৬ রান করে আক্সারের প্যাটেলও সাজঘরে ফিরলে জয়ের সুবাস ভালোভাবেই পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। শেষের নাটকীয়তায় তাই ফুটবলের মহাযজ্ঞের মাঝেই ক্রিকেটে নিজেদের জয় খুঁজে পেলো বাংলাদেশ।

এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী মিরাজের অপরাজিত ১০০ এবং মাহমুদউল্লাহর ৭৭ রানের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ৭ম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৪৮ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটার। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির সাথে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি উইকেট নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply