মরক্কো ফুটবলের উত্থানের গল্প

|

ছবি: সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপে সকল নাটকীয়তা দেখা হয়ে গিয়েছে, এমনটা ভেবে রাখলে তাদের জন্য ছিল মরোক্কান রূপকথার আরেক অধ্যায়। ফুটবল বিশ্বে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আফ্রিকার দেশ মরক্কো। মরুর বুকে চমক দেখিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আটলাস সিংহরা। কিন্তু একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসা মরক্কানদের ফুটবল কিভাবে উঠলো সফলতার চূড়ায়? শেকড়ের সন্ধানে ফিরে এসে কিভাবেই বা দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরলেন হাকিম জিয়েস-আশরাফ হাকিমিরা?

কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে নানা আলোচনার ভিড়ে খুব একটা যায়গা হয়নি আফ্রিকার দেশ মরক্কোর। গ্রুপ এফ এ মরক্কোর সঙ্গী ছিলো ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়াম। তবুও অক্ষত মরক্কান জাল। আফ্রিকার প্রথম কোন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যায়গা করে নিয়ে ফুটবল বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজদের ঝান্ডা গেড়েছেন আটলাস সিংহরা।

১৯৮৬ সালে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠেছিলো মরক্কো। তারপর প্রায় হারিয়ে যেতে বসা মরক্কোর উত্থানের গল্পটা খুব বেশি পুরোনো নয়। ২০১৪ সালে মরক্কোর ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান হয়ে আসেন ফৌজি লেকইয়া। মরক্কোর ফুটবল উন্নয়নে তিনি প্রথম যে কাজটি করেন তা হল গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্টেডিয়ামের সংস্কার। দ্বিতীয়ত ক্লাবগুলোকে বার্ষিক ৭ লাখ ডলার অনুদান সহ প্রতিটি খেলোয়াড়ের বেতন-বোনাস নিশ্চিত করা। আর তৃতীয়ত তরুণ ফুটবলারদের তুলে আনা।

মরক্কোর ফুটবলের আধুনিকায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ ফুটবল একাডেমি। যার পেছনে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে বিশ্বমানের বেশ কয়েকটি মাঠ, ফিটনেস সেন্টার সহ খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের জন্য গড়ে তোলে হয়েছে পুরো একটা গ্রাম।

আরব দেশ গুলোর মধ্যে মরক্কোই প্রথম মহিলা ফুটবল লিগ শুরু করে। একের পর এক আয়োজন করতে থাকে আফ্রিকান ফুটবলের আসরগুলো। একাডেমিতে বিভিন্ন দলকে ফ্রি ক্যাম্প করার সুযোগ দেয় তারা। আফ্রিকার যেসব দেশে ফুটবল অবকাঠামো শক্ত নয় তাদের হোম ভেন্যূ হিসেবে নিজেদের স্টেডিয়ামগুলোও ব্যবহারের সুযোগ দেয় মরক্কো। এগোতে থাকে মরক্কোর ফুটবল।

মরক্কো সবচেয়ে বড় চমকটি দেখিয়েছে ইউরোপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুটবলারদের নিজ দেশে ফিরিয়ে এনে। নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেয়া ফুটবলার মোহামেদ ইহাতারেনকে ফেরাতে তার বাবার শেষ কৃত্যের দায়িত্ব নেয়া। ডাচ দলে ডাক পেয়েও হাকিম জিয়েচের ঘরে ফেরা। ফ্রাঙ্কফুটের এক কোণে কষ্টে বেড়ে ওঠা আবদেলহামিদ সাবিরি কিংবা মাদ্রিদের দারিদ্র্য পীড়িত অঞ্চল থেকে মায়ের টানে আরব বিশ্বে পাড়ি দেয়া আশরাফ হাকিমি। এক খন্ড নিজের দেশ আর তার পতাকার রঙের প্রতি সবার ভালোবাসায় মরক্কোর ফুটবল হয়ে ওঠে সুন্দর।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply