‘মশারি’র পেছনের গল্প

|

ছবি: সংগৃহীত

তরুণ নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’ ইতিমধ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়েছে। প্রশংসার পাশাপাশি পেয়েছে পুরস্কারও। আসন্ন ৯৫তম অস্কারেও লড়তে যাচ্ছে সিনেমাটি। এরমধ্যেই এলো আরেকটি সুখবর। নুহাশের এ সিনেমার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা ও নির্মাতা জর্ডান পিল এবং ব্রিটিশ অভিনেতা ও র‍্যাপার রিজ আহমেদ। সিনেমাটির নির্বাহী প্রযোজকের ভূমিকা পালন করবেন তারা।

আন্তর্জাতিক মহলে একের পর এক পুরস্কার পেয়ে সাড়া ফেলেছে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত হরর ঘরানার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ‘মশারি’ পেয়েছে দশটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

মার্কিন অভিনেতা জর্ডান পিল তিনবার অস্কার জিতেছেন। এর মধ্যে, একবার পেয়েছেন সেরা নির্মাতা হিসেবে ‘গেট আউট’ সিনেমার জন্য। তার কোম্পানি মাংকিপও প্রডাকশনস থেকে প্রযোজনা করা হবে ‘মশারি’। রিজ আহমেদের ‘দ্য লং গুডবাই’ সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্ট হিসেবে অস্কার জিতেছিল এবং ‘সাউন্ড অব মেটাল’-এর জন্য তিনি সেরা অভিনেতার বিভাগে অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান ‘লেফট হ্যান্ডেড ফিল্ম’ প্রযোজনা করবে নুহাশের ‘মশারি’।

সম্প্রতি, রিজ আহমেদ তার ইউটিউব চ্যানেলে নুহাশ আহমেদের সাথে মশারি’র আসন্ন এ প্রজেক্ট নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন। সেই আলাপচারিতায় মশারির পেছনে নুহাশের ভাবনা ও সিনেমার অনেক অজানা দিক উঠে আসে।

‘মশারি’র গল্পের আইডিয়া নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন বলেন, মশারি থিমটার সাথে আমাদের এশিয়া মহাদেশ খুব পরিচিত। মনে পড়ে, ছোটবেলায় যখন আমি এটা টাঙিয়ে ঘুমাতাম, অনেক বেশি ভয় করতো। মনে হতো আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আর মশারির বাইরে কিছু একটা আমার জন্য ওঁত পেতে আছে। কেউ আমাকে ডাকছে। বাইরে গেলেই আমি আর নিরাপদ থাকবো না। এই মশারিই আমাকে রক্ষা করবে। এমন ভয় থেকেই আইডিয়াটা প্রথম মাথায় আসে।

ওই আলোচনায় নুহাশ শেয়ার করেন তার ফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ড ও সিনেমার সাথে তার পরিবারের সম্প্রৃক্ততার কথাও। বাবা-মার বিচ্ছেদের কারণে কতোটা ট্রমায় শৈশব কাটিয়েছেন এবং কীভাবে সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন সে গল্পও রিজকে বলেছেন নুহাশ।

নুহাশ আরও বলেন, সিনেমার গল্প আসলে দুই বোনের বন্ডিং নিয়ে। আমাকে যেমন আমার তিন বোন সবসময় প্রটেক্ট করেছে। এ গল্পেও দুই বোন কীভাবে একজন আরেকজনের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ছোট বোনের চরিত্র যে করেছে, সে আসলে আমার ভাগ্নি। শিশুদের থেকে অভিনয় বের করে আনা কঠিন। কারণ তারা অনেক বেশি রিয়াল। কিন্তু আয়রা’র ক্ষেত্রে আমি পেরেছি।

স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা মশারিতে নানাভাবে নানারকম ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চেয়েছেন নুহাশ। গল্পের পরতে পরতে আছে বিভিন্ন মেটাফোর। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশ জোরালো মেসেজ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, রিজ জানান- কীভাবে একটি সাউথ এশিয়ান কনটেন্ট গ্লোবাল কনটেন্ট হয়ে উঠলো, এই ব্যাপারটি ভালো লেগেছে তার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎসবে বাংলাদেশি একটি সিনেমা নিয়েই বারবার আলোচনা হয়েছে, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।

নুহাশ হুমায়ূন আরও বলেন, বাংলাদেশকে তুলে করার যথেষ্ট করেছি। বিশেষ করে মিউজিকে দেশি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। ল্যান্ডস্কেপগুলো দেখলে যে কেউ বুঝবে, এটাই আমার দেশ। লোকেশন খুঁজে পেতে টিমকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে অবশ্যই। কারণ ভিএফএক্স এর জন্য আমাদের বাজেট ছিল না। ভয়ে ছিলাম আসলেই শেষ করতে পারবো কিনা।

প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে অস্কার কোয়ালিফাইং চলচ্চিত্র উৎসব ‘হলিশর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ শ্রেষ্ঠ হরর বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ‘মশারি’। একই সঙ্গে ‘মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ জিতেছে সেরা শর্ট ফিকশন পুরস্কার। সিনেমাটির সঙ্গে অস্কারজয়ী দুই হলিউড তারকার যুক্ত হওয়া যেন মশারি’কে অস্কার দৌড়ে আরও দুই ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ভ্যারাইটির সম্ভাব্য অস্কার বিজয়ীর তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে এটি। আপাতত অপেক্ষা, ২০২৩ সালের সেই জমকালো অস্কার সন্ধ্যার জন্য।

/এসএইচ
       


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply