করোনার যে সাব-ভ্যারিয়েন্টে চীন বিপর্যস্ত; সেটি এবার মিলেছে ভারতেও। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪ জন ভারতীয় ‘বিএফ- সেভেন’ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিকে, চীনের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা জানিয়েছে, টিকাদান কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই মিলতে পারে চলমান এ সংকটের সমাধান। খবর দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের হাসপাতালগুলোয় নেই তিল ধারণের ঠাঁই। প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। আইসিইউ পরিপূর্ণ মুমূর্ষু রোগীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো প্রাণহানি না থাকলেও; নতুনভাবে ৩ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে মিলেছে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএফ সেভেন’। বেইজিং প্রশাসনের দাবি, নতুন এ সাবভ্যারিয়েন্টের বিস্তাররোধে নেয়া হয়েছে কার্যকরী উদ্যোগ।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এ প্রসঙ্গে বলেন, কোভিড-১৯ এর নতুন সাবভ্যারিয়েন্টের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে চীনের মহামারি প্রতিরোধক ব্যবস্থা। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। জিরো কোভিড নীতিমালা প্রত্যাহার করায়; টিকাগ্রহণ এবং নমুনা পরীক্ষায় উৎসাহ দেয়া হচ্ছে নাগরিকদের। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করাটাই এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
তবে, চীন বারবার আশ্বস্ত করলেও উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির শীর্ষ গবেষকদের দাবি- নতুন শনাক্ত হওয়া সাব ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর। সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় এখন টিকাদান জোরদার করা। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক বিধিমালাও মানতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস বলেন, চীনে করোনা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবারের ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুঝুঁকি কতোটা সেটিও যাচাই করা দরকার। তাছাড়া, দেশটিতে সংক্রমণের তীব্রতা, হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ সহযোগিতা সম্পর্কে ডব্লিউএইচও’র বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। চীনের প্রশাসনকে বলবো, টিকাদান কর্মসূচি জোরালো করুন। এটাই হতে পারে নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বিস্তাররোধের একমাত্র হাতিয়ার।
এরইমধ্যে, চীনে আতঙ্ক ছড়ানো ‘বিএফ-সেভেন’ সাব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে ভারতের গুজরাট ও ওড়িষা রাজ্য। ৪ সংক্রমিত ব্যক্তি ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের রাখা হয়েছে নজরদারিতে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছে মোদি প্রশাসন। কেননা, গেলো বছর এপ্রিলে করোনায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু দেখেছে ভারত।
ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মন্দাভিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, এখনও শেষ হয়নি কোভিডের দাপট। গত কয়েকদিনে চীনে ছড়িয়ে পড়া সাব-ভ্যারিয়েন্টের নমুনা মিলেছে ভারতের দুই রাজ্যে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলবো- সতর্কতা বৃদ্ধি করুন; জোরালো করুন নজরদারি। আর, সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ- সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা নিন। এখনই বাধ্যতামূলক না করা হলেও, সবাইকে বলবো- মাস্ক পরিধান শুরু করুন।
প্রসঙ্গত, শুধু চীন বা ভারত নয়। এর আগে, ওমিক্রনের এ সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। গবেষকরা বলছেন, উচ্চহারে বিস্তারলাভ করতে পারে এ উপধরনটি, রয়েছে সংক্রমণের ব্যাপক ক্ষমতা। সবচেয়ে বড় কথা- করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয়বার আক্রান্ত করার শক্তি রয়েছে বিএফ- সেভেনের।
/এসএইচ
Leave a reply