বলিউডের গানে রাজনৈতিক কোপের ইতিহাস

|

ছবি: সংগৃহীত

‘বলিউড বাদশাহ’ শাহরুখ খান ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমার ‘বেশরম রং’ গানটি মুক্তির পর থেকেই বিতর্কে। কোনো পক্ষ এ সিনেমাই নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছে আবার কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছে সিনেমার নাম নিয়ে। রাজনৈতিক রঙও লেগেছে ‘বেশরম রং’ এর উপর। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র এই সিনেমাকে সনাতন সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও কোপের মুখে পড়েছে বিভিন্ন সিনেমার গান।

২০১১ সালে মুক্তি পায় অভিষেক বচ্চন, রানা দাগুবতি ও বিপাশা বসু অভিনীত ‘দাম মারো দাম’ সিনেমা। একই নামে একটি আইটেম গানও ছিল এ সিনেমায়। ওই গানটির কিছু কথা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারতের বেশকিছু সংগঠন। তাদের দাবি, গানের কয়েকটি কথা শ্লীলতাহানিতে প্ররোচনা দিতে পারে। সেই গানেও কিন্তু দেখা গিয়েছিল দীপিকাকে।

২০০৭ সালে মুক্তি পায় বলিউড হার্টথ্রব মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ‘আজা নাচলে’। এ সিনেমাকেই মাধুরীর ‘কামব্যাক’ সিনেমা হিসেবে ধরা হয়। তার আগে দীর্ঘ কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। এ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক মুক্তি পেতেই শুরু হয় বিতর্ক। অভিযোগ আনা হয়, গানটি বেশ কয়েকটি জাতিকে নাখোশ করতে পারে। উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে প্রথমেই ওই গানটি নিষিদ্ধ করা হয়। পরে নির্মাতারা গানের কথা পরিবর্তন করেন এবং জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।

২০১২ সালে মুক্তি পায় করণ জোহর পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’। এই সিনেমা দিয়েই বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন বরুণ ধওয়ান, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা এবং আলিয়া ভাট। এই সিনেমার গান ‘রাধা’ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, আপত্তি জানায় অনেকগুলি হিন্দু সংগঠন। তাদের দাবি ছিল, এই গানে ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দ রাধার জন্য অবমাননাকর। ‘ধর্মা প্রোডাকশন’, করণ জোহর এবং গৌরী খানের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয় এজন্য।

২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শহিদ কাপুর এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘কামিনে’ সিনেমার জনপ্রিয় একটি গানও নিষিদ্ধের ডাক দেয়া হয় মুক্তির প্রায় সাথে সাথেই। অভিযোগ ছিল, গানটিতে একটি বিশেষ জাতির মানুষকে অপমান করা হয়েছে। পরে চাপের মুখে কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করে গানটি নতুন করে মুক্তি দেয়া হয়।

‘দিল্লি বেলি’ সিনেমার ‘ভাগ ডিকে বোস’ গানটি নিয়েও তৈরি হয়েছিলো বিতর্ক। গানটির কিছু কথা নিয়ে শোরগোল পড়তে না পড়তেই নতুন বিপদ এসে জোটে। জিতেন ঠুকরাল এবং সুমির তাগরা নামের দুই শিল্পী অভিযোগ আনেন, তাদের একটি গান চুরি করেই তৈরি হয়েছে ওই গান। শেষ পর্যন্ত গানের কথা বদলে দেয়া হয়।

১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল গোবিন্দ এবং কারিশমা কাপুর অভিনীত ‘খুদ্দার’। সেই সিনেমার গান ‘বেবি বেবি মুঝে লোগ বোলে’ গানটিকে প্রথমে নিষিদ্ধ করার ডাক দেয়া হয়। গানে ‘সেক্সি’ শব্দটির অত্যধিক ব্যবহার অনেককেই ক্ষুণ্ণ করেছিল। এরপরই নির্মাতারা গান থেকে শব্দটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।

হলিউডি সিনেমায় গানের উপস্থিতি তেমন গুরুত্ব না পেলেও ভারতীয় চলচ্চিত্রে গানের বড় একটা প্রভাব আছে শুরু থেকেই। আর সেসব গান রচিত হয় সিনেমার বিভিন্ন ঘটনার প্রাসঙ্গিকতায়। প্রাসঙ্গিক সেইসব বহু কালজয়ী গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতি ক্রমেই গ্রাস করছে চলচ্চিত্র অঙ্গনকেও। যার প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিককালের বিগ বাজেটের সিনেমাগুলোতে। তারই প্রতিচ্ছবি পাঠান সিনেমার ‘বেশরম রঙ’ গান।

/এসএইচ
       


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply