১৮ দিন গিরিগুহায় কাটানোর পর এখন তারা হাসপাতালে আছে। প্রথম ৯টি দিন কেটেছে কোনো খাবার ছাড়াই। সুর্যের আলো পূনরায় দেখার আশা তারা ছেড়ে দিয়েছিলো। এরপর বাঁচা-মরার অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে আরও ৯দিন। অথচ তাদের বয়স ১১ থেকে ১৬। এই অল্প বয়সী কিশোরদের পক্ষে এতবড় ধাক্কা সয়ে উঠে শারিরীক ও মানসিকভাবে ঠিকে থাকতে পারা বলতে গেলে অলৌকিকই।
থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলারদের কথা বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে ১২ কিশোর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই আছে। শনিবার তাদেরকে মানসিকভাবে পরিপূর্ণ সুস্থ বলে নিশ্চিত হয়েছেন ডাক্তাররা।
তাদেরকে উদ্ধার অভিযানের আগে ও পরে গুহার ভেতরের খবর নিজেরা জানলেও বাইরে আসলে কী ঘটেছে এতদিন ওরা জানতো না। সারা বিশ্ব যে ওদের ১২ জনের ফিরে আসার জন্য পথ চেয়ে বসেছিল, এবং দেশি বিদেশি শত শত উদ্ধারকর্মী যে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলো সে সম্পর্কেও ওদের কোনো ধারণা ছিলো না। এবং একজন যে জীবনও দিয়েছেন উদ্ধার সেই তথ্যও কিশোরদেরকে জানানো হয়নি।
অবশেষে শনিবার যখন মানসিকভাবে ওদেরকে শক্ত মনে হয়েছে, তখন চিকিৎসকরা জানালেন থাই নেভি সিলস এর সদস্য লেফটেনেন্ট কমান্ডার সামান গুনানের কথা। উদ্ধার অভিযানের দ্বিতীয় দিন সামান গুহার ভেতর থেকে ফেরার পথে অক্সিজেন সংকটে মারা যান।
হাসপাতালে কিশোরদের সামনে একটি এক টেবিলে সামানের একটি ছবি রাখা হয়। আর জানানো হয়, ইনি হলেন সেই ডুবুরি যিনি তোমাদেরকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। এ কথা শোনার পর নিজেদের আর দমিয়ে রাখতে পারেনি কিশোর ছেলেরা। কান্নায় ভেঙে পড়ে ছবির সামনে দাঁড়িয়ে।
থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যেদসাদা চকদামরঙসুক জানিয়েছেন, ওরা সবাই কেঁদেছে। আর সামানের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। এক মিনিট নীরবতাও পালন করে এই উদ্ধারকর্মীর প্রতি সম্মান জানিয়ে।
যেদসাদা আরও বলেন, সামানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ওরা সবাই প্রতিজ্ঞা করেছে ‘জীবনে আমরা ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবো’।
ওয়াইল্ড বোরস সদস্যরা এবং তাদের কোচ এখনও বেশ কিছুদিন হাসপাতালে কাটাবে। সবাই সুস্থ হয়ে উঠলেও এখনও ওষুধের কোর্স পুর্ণ হয়নি।
গত ২৩ জুন খেলার পর শখের বসে গুহার ভেতরে ঢুকে ১২ খেলোয়াড় ও তাদের কোচ। এরপর হঠাৎ বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার কারণে গুহার ৪ কিলোমিটার ভেতরে ওরা আটকা পড়ে যায়। ২ জুলাই তাদের সন্ধান পায় ব্রিটিশ একটি ডুবুরি দল। এরপর ৩ দফা অভিযান শেষে ১১ জুলাই তাদের সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
Leave a reply