কেন কমছে সঞ্চয়পত্রে আস্থা?

|

মুনাফা বেশি সত্ত্বেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মানুষ। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭৩২ কোটি সঞ্চয়পত্র। যদিও আগের বছর একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

জানা গেছে, বিনিয়োগ না করার পেছনের কারণ বিক্রির ক্ষেত্রে একাধিক শর্তযুক্ত করা। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, প্রথমত মানুষের হাতে টাকা নেই। অন্যদিকে ব্যাংকের ওপর আস্থাহীনতায় টাকা তুলে নিচ্ছেন তারা।

এছাড়া বিক্রির চাপ কমাতে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসাথে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত। বিক্রি কমার ক্ষেত্রে এগুলোও অন্যতম কারণ। এতে সংকটকালে সরকারের নিশ্চিত অর্থের উৎস অনিশ্চিত হওয়ার দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

গত তিন মাসে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে পারনেনি জানিয়ে সঞ্চয় অধিদফতরের এডি মোতালেব হোসেন বলেন, আগের যে কাগজপত্র তা দিয়ে এখন হচ্ছে না। অনেকের বার্ষিক প্রতিবেদন নেই, অডিট রিপোর্ট নেই। এছাড়া এমপ্লয়িদের যে ১০ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়, সে তথ্যও অনেকসময় দিতে পারে না।

এসব বিষয়ে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, গত একবছরে নতুন করে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে; মানুষের জীবনযাত্রার ওপর যে চাপ এসেছে; এতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্য থেকে যারা আগে কিছুটা সঞ্চয় করতে পারতেন; তারা এখন পারছেন না। উল্টো সঞ্চয়গুলো তাদের ভাঙতে হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের ভেতরে বিনিয়োগের একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আশঙ্কা হলো ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের যে ঋণ নেয়ার কথা; সেটি সত্যিকারর্থে অনেক বড় চাপ তৈরি করবে। ব্যাংকের তারল্য অনেক কমে এসেছে। সরকারকে ঋণ দিতে বাণিজ্যিক বাংকগুলোর ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি ঋণ নিতে হবে; ফলে বড় অংশই হয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আসবে।

সাধারণ মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম ছিল সঞ্চয়পত্র। কিন্তু সেই পথ সংকুচিত হওয়ায় অর্থ নিয়ে বাড়বে দুশ্চিন্তা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply