মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের মাধ্যম ব্যাংক। এ খাতের বিদ্যমান সংকটের সমাধান এবং সংস্কার ছাড়া মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বাজার ব্যবস্থার নৈরাজ্য বন্ধ না হলে শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও মনে করেন তারা। আর ব্যাংকারদের মতে, মেয়াদী ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে নেয়া হলে কমে যাবে মুনাফা।
ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা খেলাপি। বিতরণ করা ঋণের প্রায় সাড়ে শতাংশই খেলাপি। যার পরিমাণ এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই ঘোষিত মুদ্রানীতিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকিং মূল সংকটগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ছাড়া মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করা যাবে না।
বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর মনে করি নন-পারফর্মিং লোন। ফান্ডগুলো তো রিসাইকেল হচ্ছে না। আসল জায়গায় কেউ হাত দেয়নি। নন-পারফর্মিং লোনগুলোকে কীভাবে অ্যাড্রেস করা হবে, এগুলো কীভাবে আদায় করা যাবে- এ ব্যাপারে কোনো পলিসি নেই। যেন মুদ্রানীতির কোনো অংশই নয় নন-পারফর্মিং লোন! শুধুমাত্র সরকারকে কত ঋণ দেবো, বেসরকারি খাতে কত ঋণ দেবো সেসবই দেয়া আছে। এই ঋণগুলো কার মাধ্যমে দিচ্ছেন? এই ঋণগুলো ফেরত না আসলে তার প্রভাব কী হবে? এগুলো মুদ্রানীতির অংশ হওয়া উচিত ছিল।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাড়ানো হয়েছে রেপোর রেট। তুলে দেয়া হয়েছে আমানতের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা। তবে ঋণ সুদাহারের উচ্চসীমা আগের মতোই ৯ শতাংশ রাখা হয়েছে। অবশ্য ভোক্তা ঋণের সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন ব্যাংকাররা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার কিছুটা বাড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে বাজার ব্যবস্থার নৈরাজ্য বন্ধ না হলে এর সুফল পাওয়া যাবে না বলেও মনে করেন তারা। ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, মূল্যস্ফীতির জন্য কি কেবল সুদহার দায়ী? জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে এক ধরনের নৈরাজ্য বাংলাদেশে চালু হয়েছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা যদি না নেয়া হয় তবে কেবল সুদহার দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশে তো সবাই ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণের উচ্চসীমা তুলে না দেয়ায় খানিকটা হতাশ ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়ছে আমানতের সুদহার। কিন্তু ঋণের সুদহার না বাড়ানোয় ব্যাংকের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া, ব্যাংকিং খাতে তারল্য ব্যবস্থার উন্নতি না হলে বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যাংকারদের।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি বেশি থাকবে। মুদ্রার তারল্যের ওপর চাপ বাড়বে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে কিন্তু এক লাখ কোটি টাকার বেশি মুছে ফেলা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে, তারল্যের সংকটের একটি চাপ আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি। এবং, ডিপোজিট রেটও যদি উচ্চমাত্রায় থাকে তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, ব্যাংকের আয় আগের মতো থাকবে না। এই জায়গায় চাপের মুখে থাকবো আমরা।
আরও পড়ুন: ‘রমজানে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে ৩০ শতাংশ’
/এম ই
Leave a reply