পেশোয়ার হামলা: চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পাকিস্তান সরকার

|

ছবি: সংগৃহীত

পেশোয়ারের মসজিদে চালানো হামলাই প্রমাণ করে- সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান সরকার। শুধু তাই নয়, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে সমঝোতা আলোচনায়ও পৌঁছাতে পারেনি তারা। বিশ্লেষকদের অভিমত, পেশোয়ারের সুরক্ষিত এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরও একবার নিজেদের সক্ষমতার জানান দিলো- পাকিস্তানে কার্যক্রম চালানো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। যা, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কান্না-আর্তনাদে ভারী পেশোয়ারের হাসপাতালগুলো। পরিচয় শনাক্তের পর পুলিশ সদস্যদের মরদেহ বুঝে নিচ্ছে তাদের পরিবার। অথবা, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন আহতরা। এর জন্য, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ‘তেহরিক ই তালেবান’ কে দায়ী করা হলেও; হামলার দায় অস্বীকার করেছে টিটিপি।

হাসপাতালে চিকিৎসারত এক আহত পুলিশ সদস্যের স্বজন স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, মসজিদে ঢুকে হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এটাই প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বলয় কতোটা দুর্বল। সন্ত্রাসীদের নারকীয়তা থেকে যখন সরকারি স্থাপনাই সুরক্ষিত নয়; তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপত্তা পাবে?

এদিকে, সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাতেই হয় গণজানাজা। তারপর, আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। সাথে ছিলেন পাকিস্তানের আর্মি চিফ অব স্টাফ। সন্ত্রাসীদের মোক্ষম জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিলো তাদের কণ্ঠে। এতে সায় দিয়েছে জাতিসংঘও।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিচ বলেন, মসজিদে নামাজ চলাকালে ঘৃণ্য হামলা চালানো নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ। কারণ, ধর্মীয় মতাদর্শের ওপর আঘাত হানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। নিহতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে সংহতি প্রকাশ করছে, জাতিসংঘ।

অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণভারে কোণঠাসা পাকিস্তানের জন্য এ সন্ত্রাসী হামলা এক বড় ধাক্কা। দেশটির সরকার যদি অভ্যন্তরীণ অবস্থা স্থিতিশীল প্রমাণ করতে না পারে; তাহলে আটকে যাবে এইএমএফ এর সহযোগিতাও।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পাকিস্তানি রাজনীতি বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মুশতাক ইউসুফজাই বলেন, সুরক্ষিত ওই অঞ্চলটিতে ঢোকার জন্যেই পেরোতে হয় ৩টি চেকপোস্ট। স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে- ভেতরের কেউ আত্মঘাতী হামলাকারীকে সহায়তা করেছে। এ হামলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে থাকা পাকিস্তান সরকারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো সন্ত্রাসীরা। এরফলে- আটকে যেতে পারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইল আউট।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতিন হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিশোধ নেয়ার জন্যেই এ হামলা। গত কয়েক মাসে তেহরিক ই তালেবানের বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সফল অভিযান চালানো হয়। আর, পেশোয়ার সন্ত্রাসীদের শক্ত ঘাঁটি। তাদের সাথে সমঝোতায় যেতে প্রশাসন ব্যর্থ- এ হামলাই তার বড় ইঙ্গিত। প্রদেশটির কাছেই আফগান সীমান্ত; যা ভিন্ন কিছুর আভাসও দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে পেশোয়ারের একটি শিয়া মসজিদে জোরালো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সে হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৬ নামাজরত মুসল্লি। ওই ঘটনার জন্যেও ‘তেহরিক ই তালেবান বা টিটিপি’-কে দোষারোপ করেছিলো পাকিস্তান সরকার।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply