২৫ বছর পূর্তিতে ত্রিমাত্রিকে টাইটানিক

|

টাইটানিকের ফেসবুক পেসবুক পেজ থেকে নেয়া ছবি।

২০২৩ সালের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে ‘অ্যাভাটার টু’। সে জোয়ার শেষ না হতেই ‘টাইটানিক’ এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, থিয়েটারে আবারও ঐতিহাসিক সিনেমাটি ফিরিয়ে আনছেন জেমস ক্যামেরন। টাইটানিকের দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল দেখানোর জন্য এবার সিনেমাটিকে ত্রিমাত্রিকে নিয়ে গেছেন তিনি।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ফোরকে ভার্সনে থ্রিডিতে মুক্তি পেলো সিনেমাটি।

‘টাইটানিক’ মুক্তির ২৫ বছর! তবে, আজও তরুণদের হৃদয়ে থাকা কেট উইন্সলেট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও মোটেও বুড়ো হননি। মানসপটে থেকে গেছেন আরও একজন, সিনেমাটির পরিচালক জেমস ক্যামেরুন।

১৯৯৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। মুক্তির পরপরই বিশ্বজুড়ে যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্তুতিবাক্যে ভাসেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। অস্কার আসরে সেরা সিনেমা হিসেবে পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি ‘বিলিয়ন ডলার আয়’ করা প্রথম সিনেমার রেকর্ড গড়ে ‘টাইটানিক’। তবে জানেন কি, বিশ্বজুড়ে জেমস ক্যামেরনই একমাত্র পরিচালক যার দুই বিলিয়ন অতিক্রম করা দুইটি সিনেমাই একসাথে সিনেমা হলে চলছে এখনও!

এ সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় রোমান্টিক জুটি হিসাবে ভক্তদের মনে ঝড় তুলেছিলেন ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। সবচেয়ে বড় চমক জাগানিয়া তথ্য হলো, রোজের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করা কেটকে এ চরিত্রে নিতে প্রথমে একদমই রাজি ছিলেন না পরিচালক জেমস ক্যামেরন! কাস্ট করেছিলেন গুইনেথ প্যালট্রোকে। এদিকে, ডিক্যাপ্রিও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি তখন। তিনি ভেবেছিলেন, সিনেমাটি খুবই বিরক্তিকর হবে।

টাইটানিকই বিশ্বের প্রথম সিনেমা যার প্রযোজনা, পরিচালনা, লেখা, এডিটিং সবটাই করেছেন মাত্র একজন। জেমস ক্যামেরন। সিনেমায় যে আমরা মহাসাগরের বুকে বিশাল জাহাজটি ভাসতে দেখি, সেটির বেশিরভাগের শুটিংই হয়েছিল একটি কৃত্রিম পুলে। পানিতে পড়া মানুষদের কাঁপতে থাকার দৃশ্যগুলো আসলে নেয়া হয়েছিল মেক্সিকোর ৮০ ডিগ্রি উত্তাপের ভেতরে।

অন্যদিকে, গোধূলিবেলার আলোয় জ্যাক আর রোজের সেই বিখ্যাত রোমান্টিক দৃশ্য আদতে গোধূলিতে ছিল না। পুরোটাই ছিল কম্পিউটারের কারসাজি। সিনেমাটি সমুদ্রপথে ১৯১২ সালে বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ দুর্ঘটনার গল্প বলেই সিনেমায় ওই দুর্ঘটনার পাশাপাশি ফুটে ওঠে রোজ-জ্যাকের মহাকাব্যিক প্রেমের আখ্যান। যা দর্শকদের ‘রোমিও-জুলিয়েটের’ কথা মনে করিয়ে দেয়। শেষ দৃশ্যে সমুদ্রে তলিয়ে যায় জ্যাক, আর ভাসমান কাঠের টুকরো আঁকড়ে বেঁচে থাকে রোজ। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কেনো দুজনকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না পরিচালক।

এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন বলেন, একজন হাইপোথার্মিয়া বিশেষজ্ঞকে সাথে নিয়ে একই রকম আরেকটি দরজা তৈরি করেছিলাম। এছাড়া কেট ও লিওনার্দোর সমান ওজনের দুজন স্ট্যান্টম্যানকে নিয়ে অনেকভাবে পরীক্ষা করেও দেখেছি। বরফ পানিতে রেখেও দেখেছি, কোনোভাবেই দুজনের বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না। শুধু একজনই বেঁচে থাকতে পারতো ওই অবস্থায়।

১৯৯৫ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের তলায় গিয়ে আসল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন ক্যামেরন। পরে সেই ভিডিও সিনেমায় ব্যবহার করা হয়। এটি করতে ক্যামেরনকে মোট ১২ বার সাগরের নিচে যেতে হয়েছিলো। কখনো কখনো সেখানে একটানা ১৫-১৮ ঘণ্টাও থেকেছেন তিনি। টাইটানিক সিনেমাটি বানাতে খরচ হয়েছিল মূল টাইটানিক জাহাজ তৈরির খরচের দ্বিগুণ। এছাড়া সিনেমায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শেষ মুহুর্তের দৃশ্যগুলো নেয়া হয়েছিল মাত্র এক শটে। শোনা যায়, আসল দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন নাকি অভিনয়ও করেছিলেন এ সিনেমায়।

বিশ্বের বিনোদনপ্রেমীদের কাছে ‘টাইটানিক’ শুধু একটি সিনেমাই নয়। একটি আবেগ-অনুভূতির নাম। ক্ল্যাসিক একটি সিনেমাকে প্রায় আড়াই দশক আগে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেভাবে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন ক্যামেরন, নিঃসন্দেহে সেটি ছিল দুরূহ ও সাহসী পদক্ষেপ। ২৫ বছর পরও যার আবেদন কমেনি একটুও।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply