টানা ১০ ম্যাচ জেতার অনন্য এক রেকর্ড গড়লো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কোয়ালিফায়ার ওয়ানে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে হারালো ইমরুল কায়েসের দল। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করা সিলেট স্ট্রাইকার্স ১৭ ওভার ১ বলে ১২৫ রানে অলআউট হয়। ১২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬ ওভার ৪ বলে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভিক্টোরিয়ান্স।
গ্রুপ পর্বের খেলায় দুই দলই একে অপরের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল একটি করে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামার আগে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে নামে সিলেট ও কুমিল্লা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শফিকউল্লাহ ঘাফারির উইকেট হারায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। দলীয় ৬ রানে আফগান এই ব্যাটারকে মোসাদ্দেক সৈকতের হাতে বন্দি করেন আন্দ্রে রাসেল। আর ঠিক এক বল পর ফর্মের তুঙ্গে থাকা তৌহিদ হৃদয় রান আউটে কাটা পড়লে ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স। শান্ত’র সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে হৃদয়কে আউট করতে ভুল করেননি তানভীর ইসলাম। সরাসরি থ্রোতে ভাঙ্গেন উইকেট।
দলের আরেক ইনফর্ম ব্যাটার জাকির হাসানও এদিন ব্যর্থ ছিলেন। ৪ বলে ২ রান করে মঈন আলীর বলে নারিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাকির। ৩ ওভার শেষে ১৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যাবার পথে তখন সিলেট স্ট্রাইকার্স।
এরপর দলের হাল ধরেন নাজমুল শান্ত আর মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। ৩৭ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়ে দলের প্রাথমিক বিপদ সামাল দেন এই দুই ব্যাটার। যেখানে ১৭ বলে ২৬ রান করা ম্যাশের ব্যাট থেকে আসে দুটি ছক্কা আর দুটি চারের মার। দলীয় ৭২ রানে আন্দ্রে রাসেলের বলে তানভীরের হাতে মাশরাফী ক্যাচ দিয়ে ফিরলে মোড়ক লাগে সিলেটের ব্যাটিং লাইন আপে।
পরের ওভারে তানভীরের জোড়া আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এক প্রান্ত আগলে রাখা নাজমুল শান্ত প্রথম ব্যাটার হিসেবে স্পর্শ করেন চার শ’ রানের মাইলফলক। সতীর্থ তৌহিদ হৃদয়কে টপকে ৪১২ রান করে এখন আসরের সর্বোচ্চ রানের মালিক শান্ত। কিন্তু তানভীরের বলে বোল্ড হলে বিপদে পড়ে দল, শান্ত ক্রিজ ছাড়েন ২৯ বলে ৩৮ রান করে।
পরের বলে রায়ান বার্ল তানভীরকে উড়িয়ে মারতে গেলে ডেকে আনেন বিপদ। ডিপ স্কয়ার লেগে মুকিদুল ইসলামের হাতে ধরা পড়েন বার্ল। আর নাসির হোসেনের সমান ১৬ উইকেট নিয়ে এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার এখন তানভীর ইসলাম। নিজের ৪র্থ ওভারে দারুণ বল করলেও আর উইকেট না পাওয়ায় এই ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এই স্পিনারকে।
৭ম উইকেট জুটিতে দলকে লড়াই করার মতো পুজি এনে দিতে হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম আর জর্জ লিন্ডে। এই দুই ব্যাটার ২৯ বলে ৩৯ রান যোগ করে দলের সংগ্রহ তিন অংকের কোটায় নিয়ে যান। দলীয় ১১৭ রানে মুশফিককে সাঝঘরে ফেরান মুকিদুল ইসলাম। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পরে সিলেটের ইনিংস। ২২ বলে ২৯ রান করে আউট হন মুশফিক।
মাত্র ১৩ বলে ৮ রান করতেই শেষ চার উইকেট হারায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। ১৭ ওভার ১ বলে ১২৫ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তানভীর, আন্দ্রে রাসেল আর মুস্তাফিজুর রহমান। মঈন আলী, সুনীল নারিন আর মুকিদুল পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
১২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে লিটনকে সাথে নিয়ে উড়ন্ত শুরু করেন সুনিল নারিন। ধীরগতিতে ব্যাট করা লিটন ফেরেন মাত্র ৭ রান করে। আর ঠিক এক ওভার পর আউট হওয়া নারিনের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৩৯ রান। যেখানে ছিল ৪টি ছয় আর ৩টি চারের মার। দলীয় ৫৮ রানে জনসন চার্লস রান আউটে কাটা পড়লে ৩য় উইকেটের পতন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের।
দলীয় ৭৩ রানে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ১৩ রান করে ঘাফারির শিকার হলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু মুশফিকের স্ট্যাম্পিং আর ক্যাচ মিসের সুযোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ভিক্টোরিয়ান্স। মঈন আলীর ১৩ বলে ঝড়ো ২১ রানে ম্যাচের দাপট নিজেদের হাতে রাখে কুমিল্লা।
এক প্রান্ত আগলে রেখে ২৭ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক সৈকত। আর শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের ১০ বলে ১৫ রানে ২০ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
এদিকে, হারলেও সুযোগ থাকছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সামনে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কোয়ালিফায়ার টু’তে রংপুর রাইডার্সের মুখোমুখি হবে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
এ এইচ/ইউএইচ/
Leave a reply