নারী ক্রিকেটে ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া: সবশেষ যা জানা গেলো

|

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবারও ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া। এবার বিশ্বকাপ সফররত জাতীয় নারী ক্রিকেটার লতা মণ্ডলকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা আরেক ক্রিকেটার সোহেলী আক্তার। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তাহমিদ অমিত। মেলে ঘটনার সত্যতা। ক্রিকেটের অন্ধকার জগতের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে চলছে অনুসন্ধান। পাশাপাশি আছে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্ট‌‌‌‌‌‌’র বাস্তবতা। সে নিরিখেই তাহমিদ অমিতের কাছে জানতে চাওয়া হয় কী ঘটেছিল?

তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাচ্ছিলাম যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান নারীদের বিশ্বকাপ দলে খেলছেন এমন একজন ক্রিকেটারকে সরাসরি দেয়া হয়েছে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব। যিনি এ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনিও বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের একজন ক্রিকেটার সোহেলী আক্তার। সোহেলী এর আগে বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই রাউন্ডে খেলেছেন, এশিয়া কাপেও খেলেছেন তবে বিশ্বকাপে যাননি।

সোহেলী আমাদের কাছে দাবি করেন, এশিয়া কাপেই তার কাছে প্রস্তাব এসেছিল একটি ওয়াইড বল দেয়ার জন্য এবং ওই ওয়াইড বল দিতে পারলে তাকে আর্থিকভাবে সুবিধা দেয়া হবে- বলে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি লতা মণ্ডলকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেয়ার কথা স্বীকার করেন। যদিও তার দাবি জুয়াড়ির সাথে চ্যালেঞ্জ করে তিনি লতাকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে মধ্যস্থতাকারী বলে দাবি করেন।

অমিত জানান, এর আগে এশিয়া কাপে ‘আকাশ’ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওয়াইড বল করার প্রস্তাব পাওয়ার পর এখন সোহেলী দাবি করছেন যে তিনি ওই ওয়াইড বলটি করেননি। কিন্তু, এখন তিনিই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা এক ক্রিকেটারকে ফোন করে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, হিট আউট হওয়ার জন্য। এবং যদি তিনি হিট আউট হন তাহলে তার অ্যাকাউন্টে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা চলে যাবে।

অমিত বলেন, এরকম প্রস্তাব পাওয়ার পরে আপনি কাজটি করেন বা না করেন আপনার করণীয় হবে ব্যাপারটি অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে সরাসরি জানানো। এশিয়া কাপের সময় পাওয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে যখন আমি সোহেলীর কাছে জানতে চাইলাম যে- ব্যাপারটি কি আপনি অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানিয়েছেন? তখন ‘তিনি জানাননি’ বলে জানিয়েছেন আমাদের। যা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

আরও একটা ব্যাপার থাকে যে, আজকে তিনি যে প্রস্তাব ন্যাশনাল টিমের একজন খেলোয়াড়কে দিয়েছেন- এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, স্পট ফিক্সিংয়ের দুষ্টচক্রের সাথে ক্রিকেটাররা কোনো না কোনোভাবে যুক্ত হয়ে গেছেন। এই চক্র কতোটা গভীর, জল এরইমধ্যে কতোদূর গড়িয়েছে বা আরও কোন কোন ক্রিকেটার এর সাথে জড়িত তা হয়তো বের হয়ে আসবে সময়ের সাথে সাথে। কিন্তু, এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি কালো দিন। আর, যদি এটা সত্যি হয় তাহলে এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নিঃসন্দেহে একটি অশনি সংকেত।

সোহেলী যে ফিক্সিংয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন তা তিনিও স্বীকার করেছেন। এটিও স্বীকার করেছেন যে, তাকেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এবং প্রস্তাবের বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকেও জানাননি।

এ ব্যাপারে বিসিবি কর্তারা কী ভাবছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অমিত জানান, এই ব্যাপারটি আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করেছিলাম। বিসিবি কর্তারা বলছেন যে, এটি আমাদের অ্যান্টি করাপশন ইউনিট আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে নিয়মানুযায়ী জানাবে এবং যিনি প্রস্তাব পেয়েছেন সেই ক্রিকেটারও তাদেরকে অবহিত করবেন- এটাই নিয়ম। এ সেশনটা যেকোনো টুর্নামেন্টের আগেই হয়ে থাকে যে, একজন ক্রিকেটার যখনই প্রস্তাব পাবেন তা জানাবেন বা কোনো ফোনকল সন্দেহজনক মনে হলে সেটিও জানাবেন। প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বা না হচ্ছে সেটা ব্যাপার নয়। এখানে বিসিবি’র আসলে কিছু করার নেই। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেককে সন্দেহের চোখে দেখছেন। এটা যদি শুরুতেই মূলোৎপাটন করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হবে।

ক্রিকেটাঙ্গনে এ ঘটনার প্রভাব কেমন হতে পারে? নারী ক্রিকেটাররা কী জুয়াড়িদের জন্য সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন?

তাহমিদ অমিত: যে ব্যাপারটা জানা যাচ্ছে তা হলো ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া ‘আকাশ’ এর ফোনে অস্ট্রেলিয়া থেকে কল আসে। এভাবে আস্তে আস্তে আরও অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে যদি তদন্ত হয়। এ পর্যন্ত যে ৫-৬ জন ক্রিকেটারের নাম জানা গেছে তা নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক ও ভীতিকর। যদিও এটা এখনও প্রমাণিত হয়নি তবে এটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা স্পষ্ট অশনি সংকেত। যারা এটা তদন্ত করছেন তারা হয়তো জানেন এ ঘটনার সাথে কারা কীভাবে জড়িত। তবে জানা দরকার আমাদের ক্রিকেটাররা কোনোভাবে জুয়াড়িদের ফাঁদে পোরে গেছেন কী না। এ ঘটনার প্রভাব অনেক বড় হতে পারে, তবে প্রভাব যতো বড়ই হোক এটা তদন্ত করে বের করতেই হবে। এটা না হলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

/এসএইচ



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply