রাজধানীতে চেতনাশক খাইয়ে মোটরসাইকেল চুরি, ঘটছে মৃত্যুও

|

গোয়েন্দা পুলিশ এ চোর চক্রের দুই জনকে গ্রেফতার করলেও মূলহোতারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

চেতনানাশক খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু রাজধানীতে চেতনানাশক খাইয়ে মোটরসাইকেল চুরির ভয়াবহ এক চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের খাওয়ানো খাবারের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুও হচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মোটরসাইকেল চুরির তদন্তে নেমে এমনই এক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগ।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে চাকরি করতেন মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অফিস থেকে মোটরসাইলে বাসায় উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু, তিনি বাসায় ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুজির পর তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে যে, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে গুরুতর অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। ১০ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান গিয়াসউদ্দিন।

নিহত গিয়াসউদ্দিনের ছেলে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। আমার বাবাকে আমি কাছ থেকে দেখেছি তখন। ওনার যখনই একটু জ্ঞান ফিরতো উনি গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করতেন। সেই দৃশ্য মনে পড়লে আমি স্থির থাকতে পারি না।

তবে, এ ঘটনায় তখন কোনো মামলা হয়নি। জিডি হয়েছিলো। সম্প্রতি একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত নেমে এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগ।

ডিবি’র (লালবাগ) ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এটা আমাদের কাছে একটা নতুন বিষয় যে চুরি করতে গিয়ে এভাবে মেরে ফেলেছে। কেনো যথাসময়ে মামলা হয়নি, কেনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি! এখানে কী থানা পুলিশের কোনো অবহেলা ছিল নাকি নিহতের পরিবার ভয় পেয়ে মামলা দিতে চায়নি! সেটিও আমরা জানার চেষ্টা করছি।

চেতনা নাশক খাইয়ে মোটরসাইকেল চুরির এমন ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। এরইমধ্যে, গোয়েন্দা পুলিশ এ চোর চক্রের দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার হয়েছে ৯টি চোরাই মোটরসাইকেল। তবে এ চক্রের মূলহোতা রফিকুল ও জুয়েল ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতার ও মামলা হলেও জেলখানায় বসেই আসামিরা আরও বেশি সংঘবন্ধ হচ্ছে, বলে দাবি ডিবির।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, ওরা জেলে আসলে জামিন চাইলেই জামিন দেয়া হচ্ছে- এটা কোর্টের এখতিয়ার। কিন্তু, জামিন একবার পেলে ওরা আরও বিশাল আকারে চোর সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আমরা অনেককেই জিজ্ঞেস করি যে, আপনি দুইবার জেলে যাওয়ার পরও আবারও কেনো চুরি করেন? তখন তারা বলে যে, তারা জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেশি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে গেছে। দেখা যায় যে, আগে হয়তো তাদের চক্রের সদস্য ছিল ৩ জন, কিন্তু পরেরবার দেখা যায় তাদের চক্রের সদস্য সংখ্যা ১০ জন।

প্রসঙ্গত, নগরবাসীকে অচেনা মানুষের দেয়া খাবার না খাওয়া ও সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply