মোবাইল অ্যাপে গ্রাহক হয়ে বিদেশি সিনেমার টিকিট কিনলেই পাওয়া যাবে লভ্যাংশ। যে যত বেশি টিকিট কিনবে, তার ততো বেশি লাভ বাড়বে। সবই হবে মার্কিন ডলারে- এমন দ্রুত ধনী হওয়ার লোভে পড়ে রাজশাহীর হাজারো মানুষ বিনিয়োগ করেন ওই অ্যাপে। আর তারপরেই একদিন হুট করে অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স হয়ে যায় শূন্য। অ্যাপটি যেখান থেকে ইন্সটল করা হয়েছিলো, সেখানেও আর নেই।
মোবাইল অ্যাপে ইমুভির টিকিট কিনে ডলার কামাইয়ের লোভ কোনোমতেই সামলাতে পারেননি রাজশাহীর কাজলা এলাকার তরুণ রবিন ও বিশাল। করেন রাজমিস্ত্রির কাজ। সেখানকার আয় থেকে যতুটুক সঞ্চয় ছিলো, তার সঙ্গে মানুষের কাছ থেকে ধার করা টাকা জুড়ে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তারা এই অ্যাপে। প্রথমদিকে অ্যাপ খুললেই লাভের হিসাব দেখা যেতো। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই বদলে যায় সবকিছু।
ভুক্তভোগীরা বললেন, কাজ করে পাওয়া প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার পুরোটাই এখানে দিয়ে দিয়েছি। ওরা মেরে দিয়েছে। প্রতিটা টিকেটে ওরা ২৫-৩০ টাকা লাভ দিতো। আমরা ৩০০ টিকিট কাটলে দেখা যেতো অন্তত ৪ হাজার টাকা লাভ হতো।
নগরীর শিরইল কলোনি এলাকায় এই ইমুভি প্ল্যানের বিভাগীয় অফিসও খোলা হয়েছিলো। প্রায় আড়াই মাস ধরে আজমল হুদা নিজেকে এর এজেন্ট পরিচয় দিয়ে নিজের বাসায় অফিস খোলেন। মঙ্গলবার রাত থেকে অফিস বন্ধ। আজমলও সপরিবার লাপাত্তা।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, প্রথমে প্রতি টিকেট ১১৬ টাকা করে নিতো। পরে ১২০ করে নিয়েছে, এটা মানিক নিজে নিতো। অফলাইন ডিপোজিট করলে আরও ৩০ শতাংশ করে লভ্যাংশ পাওয়ার কথা, গত ৪দিন যখন উইথড্র বন্ধ ছিল তখন তারা আরও অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে আমরা জানতে পারি যে কোম্পানিটি আর নেই।
চীনা নাগরিক পরিচয়ে অনেকে এ অ্যাপে যোগাযোগ করায় বিনিয়োগকারীরা সন্দেহও করেননি। ফলে শহর থেকে গ্রাম অবধি হাজারো মানুষ হয়ে যান এর গ্রাহক। তাদের বেশিরভাগই নিঃস্ব হয়ে এখন শিরইল কলোনির কথিত অফিসে ভিড় করছেন।
ভুক্তভোগীদের একজনের অভিযোগ, টাকাটা শুধু আমার না। ভাই-ব্রাদার ও বন্ধুদের থেকে নিয়েছিলাম, বিকাশে পাঠিয়েছি আর এখন নো ব্যালেন্স দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয় তাহলে বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ইউনিটের সহায়তায় ভুক্তভোগীদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
প্রসঙ্গত, শর্টকাটে ধনী হওয়ার এ অভিনব ফাঁদে যারা পা দিয়েছেন, তাদের সিংহভাগই তরুণ।
/এসএইচ
Leave a reply