প্রয়োজনীয় কয়লার নিশ্চয়তা না মেলায় রামপালে বিরতিহীন উৎপাদন ঘিরে শঙ্কা

|

রাসেল আহমেদ:

চালু হলেও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরতিহীন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে জানিয়েছেন, মার্চের পর প্রয়োজনীয় কয়লার নিশ্চয়তা মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই অনেক পিছিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। তার ওপর, মিশ্র জ্বালানির ব্যবহারে যে সুবিধার আশা করা হয়েছিল- তা খুব একটা কাজে আসবে না। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

দেশে মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ষাট শতাংশ বিদ্যুৎ চায় মানুষ। সে চাহিদা মেটাতেই হিমশিম অবস্থায় আছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গেলবার জুলাই মাসে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল দুই হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানির উচ্চমূল্য আর ডলার সংকটকে দায়ী করেছিল সরকার। এখন বিশ্ব পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে গরমের বাড়তি চাহিদা মেটাতে রামপালসহ যে ক’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর সরকার ভরসা করছে, সেগুলোর সংকট পুরোপুরি কাটেনি।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে বলেন, দেড় লাখ টন কয়লা দরকার প্রতি মাসে এক ইউনিট বিদ্যুতের জন্য। যে কয়লা আসবে তাতে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল- এই ২/৩ মাসের মজুদ আছে বলা যায়। এলসি ওপেনিং চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার না ছাড়ে তবে কী হবে বলা যায় না।

উৎপাদনে আসার মাত্র ২৭ দিনের মাথায় কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। অবশেষে ছয় দিনের কয়লা দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে উৎপাদন। প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডের দাবি, সক্ষমতার ঘাটতি নেই রামপালে। তিনি বলেন, পিডিবির কাছে আমাদের বিক্রয়মূল্য হবে ১৪-১৫ টাকা। এটা কিছুটা বেশি। তবে কয়লা যদি আগের মতো একশো ডলারে নেমে আসে, তখন বিদ্যুতের দামও কমে আসবে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদনে আসলে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন খরচ কমে আসার কথা। কিন্তু কয়লার উচ্চমূল্য ও ডলার সংকটে তা হোঁচট খাওয়ায় নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, কোনো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি বিলম্ব হয়, তবে তার খরচও বেড়ে যায়। খরচ বেড়ে যাওয়া মানে ক্যাপাসিটি চার্জও বৃদ্ধি পাওয়া। এর মাশুল আমাদের দিতে হবে দীর্ঘ সময়। এর মানে হচ্ছে, আমাদের ১ হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং সহ্য করতে হতে পারে।

২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এনটিপিসির যৌথ উদ্যোগে নেয়া হয় রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে কমিয়ে আনা হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। তারপর গেল এক যুগেও শেষ হয়নি এই প্রকল্পের শতভাগ কাজ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগোছালো পরিবেশ জানান দিচ্ছে চারপাশে প্রস্তুতির ঘাটতিও। সেই সাথে, যোগ হয়েছে কয়লা সংকট। তাই, বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কতটা কার্যকর হতে পারবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply