মুখ খোলাইয়েন না, অসুবিধা হয়ে যাবে: নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি

|

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করায় সরকারের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়লেন চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। ১৪ দলীয় জোটের নেতা বলেন, ‘আমার জন্য অনেক দেশ কথা বলবে। বিএনপিকে ঘরে ঢুকানো সম্ভব, নজিবুল বশরকে নয়। খবর আছে। এটা ১৯৯১ নয়, এটা ২০২৩ সাল। আমার সিট আমি ঠিক করি, অন্য কেউ ঠিক করে না।’

ফটিকছড়িতে সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারির ১০৪ তম খোশরোজ শরীফ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ‘কেউ বলতে পারবে না আমি কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি। সরকার তো জানে আমার অবস্থান। তাহলে এটা কেনো হলো (দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা)। কওমীর সাথে সরকারের গন্ডগোল, আমি কওমীর সাথে বসলাম, সরকারকে সহযোগিতা করলাম, নাকি করি নাই ? সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি এতো বড় চক্রান্ত করেছিল, আমেরিকা যে অবস্থা করেছিল? সেটা কে ঠেকিয়েছে, সরকার আপনে ? না, আপনাকে আমি সহযোগিতা করেছি। আজ বলে দিলাম। মুখ খুললে অসুবিধা হয়ে যাবে, আমার মুখ খোলাইয়েন না।

চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়া সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের সাথে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক মাসও হয়নি কথা হয়েছে। আমি আপনাকে বলেছি, এবারও আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। নির্বাচন হয়ে যাবে। আমার সাথে দ্বন্দ্ব একটাই। সরকার এখন যে ইসলামী দলগুলোকে আনতে চাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকে হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী, প্রত্যেকে দরবার বিরোধী। একটা গোপন তথ্য দিলাম। এখানেই আমি বাধা দিয়েছি। বাধা দিয়ে যাবো। একটা করে এমপি দিয়ে তাদেরকে সংসদে আনবেন, নজিবুল বশর থাকতে সেটা হবে না। কারণ, তারা মাজার বিরোধী, ত্বরিকত বিরোধী, আহলে সুন্নত বিরোধী। এবং প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকে বকা দিয়েছে। মাইজভান্ডারকে বিতর্কিত করার জন্য আমার ছেলেদের লোন আছে বলে এটাকে ব্যবহার করে আমাদেরকে সাইজ করতে চান, সাইজ নিজেরা হয়ে যাবেন। আমি সাইজ হবো না।‘

সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি আরও বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। হয়তো আপনার অজ্ঞাতে এটা হয়েছে। এটা আপনাকে চিন্তা করে দেখতে হবে। তবে আমি রিট করবো দুদকের বিরুদ্ধে। যদিও আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু আমি রিট করবো। দুদককে কেউ চ্যালেঞ্জ করে না। আমি চ্যালেঞ্জ করবো, কারণ আমি পরিষ্কার। আমার জন্য, আমার ছেলের জন্য মাইজভান্ডার কলংকিত হবে, তার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। আমার নাম ধরে টিভি স্ক্রলে লিখেছে মাইজভান্ডারির ছেলের নামে মামলা, মাইজভান্ডার যদি না থাকতো এতো কিছু লিখতো না। মাইজভান্ডারের সাথে সেন্টিমেন্ট আছে, মাইজভান্ডারের সাথে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ লোক জড়িত।’

সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, ‘আমি জানি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলে বলেছে, কী হবে জানি না। আমি জানি কী হবে, এ মামলায় কিছুই হবে না। মাইজভান্ডার দরবার শরীফকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন না। এটা আওলাদে রসুলের দরবার, এ দরবারে যে হাত দিছে, তার হাত পুড়ে গেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে সরকারের সাথে দুরত্ব সৃষ্টির, আমি ১৪ দলে আছি, থাকবো। বেঁচে থাকলে এই ফটিকছড়ি আসন থেকেই নির্বাচন করে আবার এমপি হবো।’

বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, ‘আমার সাহস একটু বেশি। আমি সেই ব্যক্তি, যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ছেড়েছি। আপনারা সরকার এবং আওয়ামী লীগ, আপনারা পারেন নাই। আপনাদের সাহস হয় নাই নিজামী মুজাহিদের বিরুদ্ধে কেস করতে, আমি করেছি। সেদিন যদি ধর্ম অবমাননার কেস না করতাম এতো কিছু হতো না, আমার কেসে গ্রেফতারের পর তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সংসদেও সেদিন বলেছি, আমি কেস না করলে তাদেরকে গ্রেফতার করার সাহস আপনাদের হতো না, ফাঁসিও হতো না। এ সাহস মাইজভান্ডারের রক্তে আছে। আমরা মৃত্যুঞ্জয়ী, মৃত্যুকে ভয় পাই না, মৃত্যুকে জয় করে আমরা চলি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুদককে চ্যালেঞ্জ করা হবে, রিট করবো। দু:খ পাওয়া কিছু নাই, কারণ আমরা কেউ টাকা মেরে খাইনি। দুদকের সাথে আর কে জড়িত, সরকারের উচিত তাদের বের করে জনসমক্ষে নিয়ে আসা’।

উল্লেখ্য, প্রাইম ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির দুই ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারি এবং সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা করেছে দুদক।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply