ব্যাটে লেখা ছিল ‘জয় বাংলা’; এই শব্দ যুগল জাতিকে পৌঁছে দেয় মুক্তির পথে

|

শাকিল হাসান:

একটি ক্রিকেট ম্যাচ পরিণত হয়েছিল জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে। সেখানে স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছিল একটি ব্যাটে লেখা লেখা দুইটি শব্দ ‘জয় বাংলা’। যে শব্দ যুগলের দৃপ্ত উচ্চারণ পরবর্তী কয়েকটি মাসে একটি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছিল মুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্যে।

পাকিস্তান একাদশের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক একাদশের চার দিনের ক্রিকেট ম্যাচটি শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নেন পাকিস্তান একাদশের অধিনায়ক সাইদ আহমেদ। ওপেনিংয়ে নামেন আজমত রানা আর সেই দলের একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড় রকিবুল হাসান। দুই ব্যাটার যখন মাঠে প্রবেশ করেন তখনই সবার চোখ কপালে ওঠে। ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরা ফ্ল্যাশও জ্বলে উঠে।

বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, তখন আমার মাথায় আসে কিছু একটা করতে হবে। তখন সবুজ রঙের ওপর ভিত্তি করে তিন কোণা স্টিকার বের হয়েছিল। সাদা রিভার্সে উপরে জয় বাংলা লেখা, মাঝখানে লাল রঙের গোল সূর্য। তার উপরে হলুদ পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) মানচিত্র বসানো।

এরপর, স্টেডিয়ামের এই খবর আর চাপা থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে রাজপথ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। ভালোয় ভালোয় ম্যাচের দ্বিতীয়, তৃতীয় দিন পার হয়। চতুর্থ দিন ম্যাচে বিরতির সময়ই খবর আসে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেছে ইয়াহিয়া।

রকিবুল হাসান বললেন, ১ মার্চ ওই ঘোষণার সাথে সাথে স্টেডিয়ামে তো উত্তাপ; মানুষজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। বাইরে উত্তাল সমুদ্র। প্রশাসন আসতেছে, হিসেব করলে এটা তো দেশদ্রোহী। কিন্তু আমি জেনেশুনে তা করেছি। আমি আমার প্রতিবাদ দেখিয়েছি।

৫২ বছর আগের সেই ম্যাচের স্মৃতি এখনও তরতাজা রকিবুল হাসানের। কান পাতলে এখনও শোনেন স্টেডিয়াম ভরা ক্ষুব্ধ জনতার গগণবিদারী স্লোগান।

রকিবুল হাসান বলেন, এখনও আমার কানে বাজে সেই স্লোগান। পুরো স্টেডিয়ামে একটাই স্লোগান ছিল, জয় বাংলা। সেই জয় বাংলা স্লোগান পুরো কম্পিত করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। তারপর তো ইতিহাস।

বাঙালির হাতে শাসনভার অর্পণে এমন টালবাহানায় ক্ষেপে ওঠে মাঠের হাজার দশেক দর্শক। পণ্ড হয়ে যায় ম্যাচ। আর স্টেডিয়াম থেকে সড়কে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সভা করছিলেন হোটেল পূর্বানীতে। ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল সেখানে। বিক্ষোভ মিছিলটি তখন হোটেলের সামনে এসে পৌঁছালে জনতার সামনে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন জোরদারের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতালের ডাক দেন তিনি। আর শুরু হয়ে যায় চূড়ান্ত আন্দোলন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply