সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
মরেও যেনো শান্তি পেলেন না সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়ার আলি (৮০)। মৃত্যুর পরই স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে দুই স্ত্রীর মধ্যে বেধে যায় বিপত্তি। সম্পত্তির লোভে আপন সন্তানও বাধা হয়ে দাড়ায় বাবার দাফন কার্যে। । এক পর্যায়ে আদালতের নির্দেশেই দাফন করা হয় আইনজীবী ইয়ার আলিকে।
এর আগে ষষ্ঠবারের মতো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে মারা যান তিনি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। এর পরেই বাধে বিপত্তি। তার প্রথম স্ত্রী-সন্তানদের বাধায় আটকে যায় দাফনের কাজ। এরই মধ্যে তার মরদেহে পচন ধরতে শুরু করে।
কিন্তু কোনো সমঝোতা না আসায় মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত তার মরদেহ ছিল দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতেই। পরে বিকাল ৫টার দিকে কোর্টের নির্দেশনায় কলারোয়া থানা পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে দাফন করে তাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির প্রথম স্ত্রী জোহরা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা খানমের একটি ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, ইয়ার আলির জীবদ্দশায় ৩০ বিঘারও বেশি সম্পত্তি ছিল, কোটি টাকার উপরের ব্যাংক ব্যালান্স এমনকি বসত বাড়ির পুরোটাই তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সের নামে লিখে দিয়েছেন।
এদিকে জমি, বাড়ি ও গচ্ছিত টাকার এক কানা-কড়িও পাননি তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানরা। আর তাতেই অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির মৃত্যুর পর তারা পৈতৃক সম্পত্তি ও টাকা পয়সার ভাগ দাবি করেন। ভাগ না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইয়ার আলিকে দাফন করতে দেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন।
এরই মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তার বাড়িতে যান সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেনসহ আইনজীবীদের একটি দল, কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ এবং স্থানীয় কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনসহ অনেকেই। তারা বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে মঙ্গলবার বিকাল নাগাদও তাকে দাফন করা হয়নি।
চেয়ারম্যান জানান, তার পেট ফুলে গিয়েছিল। নাক ও কান বেয়ে রক্ত আসছিল। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম পক্ষের স্ত্রী জোহরা খাতুনের ছেলে অ্যাড. হাসনাত কবির জানান, ‘আমার বাবা আমার মা ও তার চার মেয়ে এবং আমাকেসহ প্রথম পক্ষের সবাইকে জমি টাকা ও বাড়ির স্বত্ব থেকে বঞ্চিত করে গেছেন। তিনি আমাদের কাউকে এক কানাকড়িও দেননি। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ। সহায় সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আমাদের নামে না দেওয়া পর্যন্ত তার লাশ দাফন করতে দেওয়া হবে না’।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বারবার চেষ্টা করেও দাফনে নিজের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে কলারোয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তিনি আরও বলেন, প্রথম পক্ষ বলছে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তাদেরকে কিছু সম্পদ দিতে হবে।
অপরদিকে, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানদের দাবি, প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলিকে গত ৩২ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন তারা। এজন্য তিনি সন্তুষ্ট হয়ে সব কিছু তাদের নামে দিয়ে গেছেন। এর থেকে এক শতক জমিও আমরা দেব না।
চেয়ারম্যান জানান, গ্রামের ৯৯ শতাংশ মানুষ চায় প্রথম পক্ষকে কিছু সম্পদ দিতে। কিন্তু তাদের চাওয়াও নিস্ফল হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয় পক্ষের দাবি প্রয়াত ইয়ার আলি তার পৈতৃক জমির পুরোটাই প্রথম পক্ষকে দিয়ে গেছেন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পক্ষ আট বিঘা জমি নিজেদের নামে রেখে বাকিটা ভাগ বাটোয়ারা করে দিতে সম্মত হয়।
এ বিষয়ে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান, প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে আদালত তার মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়। সে অনুযায়ী বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে তার মরদেহ দাফন করে।
যমুনা অনলাইন: আরএম/আরা
Leave a reply