নিজের স্বার্থ নয়, সমাজের সার্বিক উন্নতিই একজন প্রকৃত মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিত: অরিজিৎ সিং

|

ক্ষুদে ভক্তদের সাথে সেলফিবন্দি অরিজিৎ।

মারিয়া হোসেন:

এ মুহূর্তে হিন্দি প্লেব্যাকের জগতে শীর্ষে তার নাম। তার কন্ঠের যাদুতে মুগ্ধ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বলিউড কিংবা টলিউড একাধিক ভাষায় গান গাওয়াসহ দেশ-বিদেশে করে চলেছেন অসংখ্য কনসার্ট। এসবের বিবেচনায় অরিজিৎ সিংকে দশকের সেরা কণ্ঠশিল্পী তাকে বলাই যায়। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও তার মধ্যে নেই স্টারডমের অহংকার, বরং বরাবরই প্রচার বিমুখ থাকতেই ভালোবাসেন অরিজিৎ। তার সম্পত্তির পরিমাণও নেহাৎ কম নয়। তবুও সাদামাটা জীবনযাপন অরিজিতের।

হাজার ভক্তের মনে রাজত্ব করছেন অরিজিৎ সিং। যার গান মানেই যেকোনো সিনেমায় বাড়তি পাওনা। যে মানুষটির কনসার্টের টিকিট লাখ টাকায় বিক্রি হয়, যার সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে থাকেন ভক্তরা, সেই অরিজিতকেই দেখা যায় সাধারণ মানুষের মতো পথে চলতে। কোনো বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিংবা বাংলো নয়। দামী গাড়ি থেকে নামা নয়, আশেপাশে বডিগার্ড নয়, তবে কীভাবে অরিজিৎ সিং এভাবে থাকেন?

সেলিব্রিটির সংজ্ঞা সাধারণ মানুষের কাছে খুব স্পষ্ট। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা স্টারকাস্ট। তবে অরিজিৎ সিং এসবের বাইরে। সাধারণ পোশাক, পায়ে চটি, স্কুটারে চেপে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অরিজিৎ। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের কাছে এ ছবি নতুন নয়। অরিজিৎ সিংকে নিজের এলাকায় এভাবেই দেখা যায়। এক সাক্ষাৎকারে অরিজিৎকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তিনি কেন এতো সাধারণভাবে থাকেন? পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, এতো ইউনিক প্রশ্ন কেন? আমি এভাবেই থাকতে পছন্দ করি। এভাবেই ভাল আছি।

তারকা জগতের চাকচিক্য কিংবা অহংকার কোনোটাই স্পর্শ করতে পারেনি গায়ক অরিজিৎকে। অথচ তার সম্পদ-সম্পত্তি মোটেও কম না। দেশ-বিদেশের সিনেমার গান আর শো করে অরিজিতের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় এখন ৫৫ কোটি রুপি। একেকটি গানের জন্য তার পারিশ্রমিক ১৫ থেকে ২৫ লাখ রুপি। অথচ ছেলেকে ভাল কোনো স্কুলে পড়ান না তিনি। নিজের জন্মস্থান মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে এককালে যে স্কুলে নিজে পড়েছিলেন, সেই ছোট স্কুলটিতেই ভর্তি করিয়েছেন ছেলেকেও।

এমনকি এতোদিনেও কোনো গাড়ি কেনেননি অরিজিৎ। সম্প্রতি নিজের ম্যানেজারের চাপে একটি সুলভ মূল্যের গাড়ি কিনেছেন তিনি। জানা গেছে, উপার্জিত টাকার সামান্য দিয়েই পরিবারের খরচ চালান এ সুপারস্টার। বিলাসবহুল জীবনযাপনে নয়, বরং বাকি টাকা তিনি খরচ করেন সমাজের কল্যাণে। নিজে যে স্কুলে পড়েছিলেন সে স্কুলটিকে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাসম্পন্ন করতে নিয়েছেন সভাপতির দায়িত্ব। নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও খুলেছেন। ভবিষ্যতে নিজ গ্রামে হাসপাতাল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে গুণী এ শিল্পীর।

এদিকে, যিনি হাজারও ভক্তের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন, সেই গায়ক অরিজিৎ এর মন দখল করে রেখেছে কে? জানা যায়, ছোটবেলার বান্ধবী কোয়েলের সাথে ২০১৪ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। অরিজিতের মতো তার স্ত্রীও ভীষণ সাদামাটা। কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, অরিজিতের কনসার্টে কোনো ভিআইপি পাসে নয়, বরং আর দশজন সাধারণ দর্শকের মতো কোয়েলও জমিয়ে উপভোগ করেন তার গান।

এখনকার যুগে যেখানে শোঅফের ছড়াছড়ি সর্বত্র, বিশেষ করে বলিউডে। তারকা মানেই ধরাছোঁয়ার বাইরে, অন্যরকম এক লাইফস্টাইল। সেখানে অরিজিতের জীবন দর্শন হলো, নিজের স্বার্থ নয়, বরং সমাজের সার্বিক উন্নতিই একজন প্রকৃত মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এ কারণেই সাধারণের মাঝে তিনি এক অসাধারণ, অনন্য একজন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply