মোহাম্মদপুরের নবী হত্যা রহস্য ও চাঁদাবাজির আদ্যোপান্ত

|

নিহত নবী (বামে), যমুনার গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত চাঁদাবাজির দৃশ্য (ডানে)।

আশিক মাহমুদ:

মোহাম্মদপুরে গাড়ির স্ট্যান্ড আর ফুটপাতে প্রতিমাসে চাঁদাবাজি হয় কয়েক কোটি টাকা। যা নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় সন্ত্রাসী আর ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা। এনিয়ে কয়েকটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। সর্বশেষ মাহি ও বাত রাসেল নামের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে বলি হয়েছেন লেগুনার লাইনম্যান নবী হোসেন।

গত ৪ এপ্রিল নিখোঁজ হন মোহাম্মদপুর এলাকার লেগুনার লাইনম্যান নবী হোসেন। পরদিন তুরাগ নদী থেকে তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার হয়। নবীর স্বজনরা জানান, এক সন্তানের জনক নবী দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে লেগুনার লাইনম্যানের কাজ করতো।

যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে প্রতি লেগুনা থেকে টাকা তুলতো নবী। যা ভাগ বাটোয়ারা হতো বিভিন্ন পর্যায়ে। সময় যত গড়াতে থাকে, বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর আরও তথ্য। জানা যায়, গাবতলী থেকে বেরিবাঁধ রোডে লেগুনা চালাতে হলে প্রতিদিন লেগুনা প্রতি ১৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। যা ধরা পড়ে যমুনা টেলিভিশনের গোপন ক্যামেরায়।

পাশের বাইক স্ট্যান্ডেও হয় চাঁদাবাজি। বাইক থামালেই দিতে হয় ১০ টাকা। যা আদায় করে আরিফ নামের এক যুবক। আরিফ নিজেও স্বীকার করলেন চাঁদাবাজির কথা। বললেন, দিনে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এভাবেই চাঁদা তুলে আদায় করা হয় এই বাইক স্ট্যান্ড থেকে। এছাড়াও বাস, সিএনজি, ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ সব স্ট্যান্ড থেকে আলাদা আলাদা চাঁদা আদায় করা হয়।

মোটা অংকের চাঁদাবাজি হয় ফুটপাত থেকেও। চাঁদাবাজির এই কোটি কোটি টাকা নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদল। তার সাথে আছে, লাল্লু, ঘাট বাবু, গ্যারেজ সোহেল, বাত রাসেল, মাহিসহ আরও অনেকে। এদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মামলা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন থানায়।

যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধান বলছে, চাঁদাবাজি আর এলাকার আধিপত্য নিয়ে বাত রাসেল ও মাহি গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। হত্যার শিকার নবী হোসেন ছিলেন রাসেল গ্রুপের সদস্য। পুরনো দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছেন তিনি। যদিও পুলিশ বলছে, নারীঘটিত কারণে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে নবীকে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাহিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।

এ নিয়ে ডিএমপির ডিসি (তেজগাঁও) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, মূল হত্যাকারী কবিরের স্ত্রীর প্রতি আসক্তি ছিল নবীর। এর জেরেই শত্রুতা তৈরি হয় তাদের মধ্যে। এক পর্যায়ে কবিরের বন্ধু ইমরান, রাব্বি এবং মাহি মিলে নবীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

চাঁদাবাজি ও এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে এসব অপরাধীরা কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এইচ এম আজিমুল হক জানান, মোহাম্মদপুরের এসব জঞ্জাল এক দিনের নয়। পুলিশ এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply