সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর ৪৪ আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল এ রায় ঘোষণা করেন
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা-১ তালা কালারোয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব, উপজেলার যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু, আরিফুর রহমান রঞ্জু ও রিপন।
এই মামলায় ৫০ আসামির মধ্যে ৪৮ আসামিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে নয়জন পলাতক অবস্থায় রয়েছে।
রায়ের পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের গাড়িতে তোলার সময় সেখানে বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম চন্দনসহ বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা আদালতের পিপি আব্দুল লতিফ জানান, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর এ রায় কার্যকর হওয়ায় সাতক্ষীরার মানুষ খুশি। তবে রায় ঘোষণাকালে আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে যান। সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলাকারীরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে ও বোমা বিস্ফোরণ করে বলে অভিযোগ করা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এ সময় বহরে থাকা ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে ওই সময় মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ। এ ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করার আদেশ দেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিন ভাগে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে সাক্ষী করা হয় ৩০ জনকে। তবে ৯ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি স্থগিত করা হয়। হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেয়ায় সাতক্ষীরার নিম্ন আদালতে গত তিন বছর বন্ধ হয়ে ছিল মামলাটির বিচারকাজ।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গত বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন। এরই আওতায় মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
/এসজেড/এমএন
Leave a reply