‘১৩-১৬ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত আনতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোচা’

|

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ (Mocha) আগামী ১৩-১৬ মে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পর্যালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ৮ থেকে ৯ মে এর মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ মে’র মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ও ১১ ই মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে।

তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ ১৪ মে মধ্যরাতের পর থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থলভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট’র সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে খুবই শক্তিশালী হয়ে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ যে স্থানে (দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর) উৎপত্তি হওয়ার কথা নির্দেশ করছে এবং যে পথে (উত্তর-পূর্ব দিকে) অগ্রসর হওয়ার কথা নির্দেশ করছে সেখানে সবচেয়ে বড় হুমকি হবে জলোচ্ছ্বাস। ১৪ মে (চাঁদের ৮১ শতাংশ অন্ধকার থাকবে) সন্ধ্যার পর থেকে যদি ঘূর্ণিঝড়টি স্থালভাগে আঘাত হানা শুরু করে তবে কমপক্ষে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চর ও উপকূলীয় এলাকাগুলো। ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি এবং স্থলভাগে আঘাত করার সময় যদি তিনদিন পিছিয়ে ১৭/১৮ তারিখ হয় তা হলে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের চর ও উপকূলীয় এলাকাগুলো। কারণ, ১৮ মে অমাবস্যার রাত।

ঘূর্ণিঝড় মোচা মোকাবিলায় মোস্তফা কামাল পলাশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। সেগুলো হলো-

১) উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আগামীকাল থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করা ।
২) কৃষকদের সকল পাকা ধান মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে কেটে গোলায় তোলা।
৩) উপকূলীয় এলাকার মৎস্য চাষিদের জলোচ্ছ্বাস থেকে মাছের ঘের রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
৪) লবণ চাষিদের মে মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সকল লবণ তুলে ফেলা।
৫) ১০ তারিখের পরে নতুন করে সমুদ্রে মাছ আহরণে জেলেদের বারণ করা। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের জেলেরা যেন অবশ্যই ১১ মে এর মধ্যে ও খুলনা বিভাগের জেলেরা অবশ্যই ১২ মে এর মধ্যে উপকূলে ফেরে, সেটি নিশ্চিত করা।
৬) মে মাসের ১২ তারিখের পূর্বেই উপকূলীয় সকল বেড়িবাঁধের ত্রুটি সারানো, দুর্বল স্থানগুলো মেরামত করা।

পোস্টের শেষে তিনি বলেন, পুরো এপ্রিল মাস উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে কোনো লঘু চাপ/ নিম্নচাপ/ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। ফলে ব্যাপক পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রের পানিতে। ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ খুবই শক্তিশালী হবে। মে মাসের ৩ তারিখের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ও মে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ ঠিক কোন শক্তিতে উপকূলে আঘাত হনতে পারে।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply