যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবিসির ইয়ালদা হাকিমের সাথে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সকল প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল। কিন্তু এখন কেন বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দিলো, সে প্রশ্নও রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি জানি না, হয়তো যুক্তরাষ্ট্র চায় না আমার কাজ অব্যাহত থাকুক, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়তো গ্রহণ করতে পারছে না। এটা আমার অনুভূতি। একটা পর্যায়ে সন্ত্রাস সব দেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছিল। আমাদের দেশে আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করেছি। এরপর মাত্র একটা ঘটনা ঘটেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আগে বাংলাদেশে বন্দুকযুদ্ধের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিবিসির ইয়ালদা হাকিম। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে ২০১৮ সালে ৪৬৬ মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালে ৩৮৮ মানুষ এভাবে নিহত হয়েছে আর ২০২০ সালে নিহত হয়েছে ১৮৮ জন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এই সংখ্যা মাত্র ১৫ জনে নেমে এসেছে।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১২টি প্রতিষ্ঠান মিলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও যেসব সংখ্যা তারা উল্লেখ করেছে, সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। কারণ আমরা প্রমাণ চেয়েছিলাম, সেগুলো তারা পাঠিয়ে দিক, আমরা তদন্ত করে দেখবো।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তাদের দেশের কী অবস্থা? আমেরিকায় কী ঘটছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল, শপিং মল, রেস্তোরায় হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমনকি স্কুল শিক্ষার্থীরা, সাধারণ মানুষ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সশস্ত্র ব্যক্তির হাতে নিহত হচ্ছে। তাদের উচিত শিশুদের জীবন রক্ষা করা। তারা নিজেদের লোকজনের ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম। তারা দেয়নি।
এ সময় ইয়ালদা হাকিম উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ভোটের এই হার মিশরের মতো অনেক সামরিক শাসকের চেয়েও বেশি। এটা অনেকটা ভ্লাদিমির পুতিনের ভোটের মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জবাবে বলেন, কেন নয়! আমাদের কাজের জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা তাদের জন্য কাজ করেছি। আমাদের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে। আমাদের জনগণ রাজনৈতিক অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র কমেছে, খাদ্য নিরাপত্তা বেড়েছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহায়ন- সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। তাহলে মানুষ কেন আমাদের ভোট দেবে না? নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগই আইন করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে তাই তারা ভোট পেয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী জানান, মানবাধিকারের কথা বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে নিরাপদে থাকার কথা এবং এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জাতিসংঘের, আমাদের না। যখন তারা বিপদে ছিল, আমরা তাদের আমাদের দেশে ঢুকতে দিয়েছি, তাদের জন্য সব ব্যবস্থা করেছি। ৪০ হাজার নারী গর্ভবতী ছিল, তাদের খাবার, স্বাস্থ্য চিকিৎসা দিয়েছি। প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেনি, আমাদের দেশের লোকজন তাদের সহায়তা করেছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি, তারা যাতে এসব মানুষকে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এটা তাদের দায়িত্ব। তারা এই বোঝা চিরদিনের জন্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এমনিতেই আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের স্থানীয় মানুষজন অনেক দুঃখকষ্ট ভোগ করছে।
/এম ই
Leave a reply