স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:
কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের দুই সহস্রাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপড়ে গেছে হাজার হাজার গাছপালা। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ উপড়ে পড়ায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সাথে চারঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল রংপুরের। ঝড়ে আম, ভুট্টা, গম, ধান, কলাসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সোমবার (১৫ মে) রাত সাড়ে দশটার পর থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থেমে থেমে কালবৈশাখী ছোবল মেরেছিল এ অঞ্চলে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন জানান, কালবৈশাখীতে উপজেলার পারুল, তাম্বুলপুর এবং ইটাকুমারী ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও তাম্বুলপুর, ছাওলা ও সদর ইউনিয়ন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, এই ছয় উপজেলায় দেড় হাজারেও বেশি বাড়িঘর দুমুড়ে মুচড়ে গেছে। মানুষজনকে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে হবে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাটের ওপর উপড়ে পড়েছে শেকড়সহ হাজারো গাছ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সকাল থেকেই এসব গাছ অপসারণের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়াও খুটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিকেলের দিকে শুধুমাত্র পীরগাছা সদর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহর দেয়া গেছে।
ইউএনও আরও জানান, পারুল, শরীফ সুন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসী ভীষণ কষ্টে পড়েছে। রাতে তাদের থাকতে হবে খোলা আকাশের নীচে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়িঘরের তালিকা করছি। একটি তালিকা ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। সার্বিকভাবে বুধবার (১৭ মে) সরকারিভাবে সহযোগিতা শুরু হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ দুর্যোগে সবাই মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছেন।
ইউএনও আরও জানান, কালবৈশাখীতে ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা এখন ভালো আছেন।
এদিকে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন জানান, কালবৈশাখীতে শহীদবাগ, কুর্শা, টেপামধুপুর, বালাপাড়া, সারাই ও হারাগাছ ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে, চর এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই তাই তালিকা তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা ছবিসহ বাড়িঘরের তালিকা নিচ্ছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও মাঠে আছেন, তারা তালিকা করছেন। বুধবার (১৭ মে) তালিকা ফাইনাল করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের হিসাব দেয়া যাবে। তবে ক্ষতি অনেক হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের পরিদর্শন করে ইউএনও তারিন বলেন, শহীদবাগে এক নারী আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তালিকা হওয়া মাত্রই সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে যাবে।
তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ জানান, ঝড়ের কারণে শুধু যে বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়েছে তা নয়, বোরো, আম, কলা, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কৃষি বিভাগ মাঠের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। পাশাপাশি নুয়ে পড়া ও ঝরে পড়া ফসলগুলো কীভাবে ঘরে তুলবেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন।
রংপুরের ডিসি ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হওয়া মাত্রই তাদের জন্য সরকারি সহযোগিতা দেয়া হবে।
/এসএইচ
Leave a reply