করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

|

লামিয়া তিথী:

করোনা মহামারির কারণে থমকে গিয়েছিলো পুরো বিশ্ব। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মোকাবেলা করেছে করোনার থাবা। সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাখাত। এ ক্ষতি মোকাবেলা করতে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, বিশ্বে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব থেকে কম বিনিয়োগ হয় বাংলাদেশে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বাড়াতে হবে উপবৃত্তি।

নোয়াখালীর ফয়সালের এখন থাকার কথা স্কুলে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাকে কাজ করতে হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে। করোনার পরে তার আর ফিরে যাওয়া হয়নি স্কুলে। পেটের তাগিদে আসতে হয়েছে রাজধানী ঢাকায়।

করোনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন জানায়, ।

রাজধানীতে একটি গাড়ির দোকানে কাজ করে করোনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ফয়সাল।

করোনায় স্কুল বন্ধ হয়েছিলো সাদিয়ারও। মহামারিতে আর্থিক সংকটে পড়ে যায় তার ৮ সদস্যের পরিবার। ছোট্ট সাদিয়া পরিস্থিতি বোঝে, কিন্তু তবুও তার মন শুধু ফিরে যেতে চায় স্কুলের আঙিনায়।

করোনায় ঝরে পড়া আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম জানায়, বাবার চাকরি নেই টাকা নেই তাই স্কুলে যেতে পারি না। বাবা বলেছে, চাকরি পেলে আবার স্কুলে যাবো।

সাদিয়ার মা রহিমা বেগম জানালেন, সরকারের উচিত বই খাতার সাথে টাকা দিয়েও সাহায্য করা। সংসার চালাতে পারি না বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবো কীভাবে?

রাজধানীর নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানালেন করোনার পরে ঝরে পড়া অনেক শিক্ষার্থীকেই আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি স্কুলে।

নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুল নাঈমা বলেন, আমাদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা কোথায় আছে সেটা বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমাদের। আমরা মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম যে ওদের বেশিরভাগই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে।

ইউনিসেফের জরিপ বলছে; সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভর্তির হার ছিলো ৯৭.৪২ শতাংশ, কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলো ৮৫.৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ ঝড়ে পড়েছে ১৪.১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ৩৫.৬৬ শতাংশ।

ব্রাকের শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়নে লাগছে সময়।

এ প্রসঙ্গে ব্রাক এডুকেশনের প্রোগ্রাম হেড প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মন বলেন, এমআইএস এর হিসেব বলছে যে, ২০২০-২১ সালে প্রায় ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীর এনরোলমেন্ট কমে গেছে। কী কারণে এমনটা হয়েছে তা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, মেয়েদের শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে মন্ত্রী, সচিবদের বেতন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু ২০১৫ সালের করা শিশুদের ভাতা ২০২৩ সালে এসেও বাড়লো না। বাল্যবিবাহ রোধ করতে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে বৃত্তি বাড়ানো খুবই দরকার।

একইসাথে শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল আবারও চালুর পরামর্শ এ শিক্ষাবিদের।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply