রংপুরে তদন্ত করতে গিয়ে গুলির হুমকি, পুলিশ-এলাকাবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জমি–সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এক নারীকে গুলি করার হুমকি দেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষে ৪ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়েছে। আর গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে।

শুক্রবার (২ মে) সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর বরাতে পুলিশ জানায়, রংপুর মহানগরীর সিও বাজার এলাকার মহুবার রহমান নামের এক ব্যক্তি গঙ্গাচড়ার ধোলাপাড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ৭৫ শতক জমি বায়না দলিল করেন। দলিলে উল্লেখ করা হয়, ছয় মাসের মধ্যে জমির সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে আশরাফুলের কাছ থেকে মহুবার রহমান কবলা দলিল করে নেবেন। কিন্তু, ছয় মাস পার হলেও আশরাফুলকে তিনি টাকা দিতে ব্যর্থ হন।

শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় এ জমির মালিক আশরাফুল শুক্রবার (২ জুন) সকালে ওই জমিতে গাছ লাগাতে যান। এ খবর পেয়ে বায়না দলিলকারী মহুবার ও তার লোকজন জমিতে গিয়ে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও উচ্চবাচ্য হয়। পরে মহুবার এবং আশরাফুল দুইজনই থানায় বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’টি লিখিত অভিযোগের তদন্ত করতে গঙ্গাচড়া থানার এসআই রেজায়ে রাব্বী পুলিশ ফোর্স নিয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ জমির মালিক আশরাফুলকে টেনেহেঁচড়ে পিকআপ ভ্যানে তোলার চেষ্টা করেন। তখন আশরাফুলের লোকজন তাকে পুলিশ পিকআপে তুলতে বাধা দিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় এক পুলিশ সদস্য এক নারীকে গুলি করার হুমকি দিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয়রা। তারা উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে মারধর করতে থাকে। এ সময় আহত হন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজায়ে রাব্বী মণ্ডল (২৮), পুলিশ সদস্য মিথুন রায়, ওয়েদুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

আহতদের উদ্ধারের সময়ও গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এ সময়ে অন্তত ১০ জন গ্রামবাসী আহত হন। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান। পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। আটক করা হয় এলাকাবাসী জাকির হোসেন (৩৭), ময়না বেগম (৪০) ও মিরকুলালকে (৪৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, পুলিশ এসে মহুবারের পক্ষ নিয়ে কথা বলা শুরু করে। এ সময় তারা জমির মালিক আশরাফুলকে টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। তখন সেখানে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা করেন। এ সময় একজন নারীর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেয় পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। অতিরিক্ত পুলিশ আসার পর ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও তারা একটি ওয়ারলেস সেট ফেলে যান। সেটি স্থানীয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান জানান, সরকারি কাজে পুলিশকে বাধা দিয়ে মারপিট করা হয়েছে। পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে কোনো গুলি ছোড়েনি। আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ প্রসঙ্গে গঙ্গাছড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রীতি সাহা জানান, আহত এসআই রেজায়ে রাব্বীর শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর বাকি পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply