‘পান্তের জন্য করে দেখাও’- ওভালে এক তরুণ ভারতীয় সমর্থকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল এই কথা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এই কথার অর্থ অনেকেই বুঝতে পারবে। ২০২১ সালে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টের শেষদিনে যে বীরত্বগাথা রচনা করেছিলেন রিশাভ পান্ত, সেটারই পুনরাবৃত্তি চায় সেই সমর্থক। গাড়ি দুর্ঘটনার পর পান্ত এখনও সেরে ওঠছেন। ওভালে শেষদিনে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৭ উইকেট। ভারতের এখনও ২৮০ রান দরকার। তবে দলটির যে এই অবস্থা থেকেও ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে বিশ্বাস আছে, সেটিই জানানলেন দলটির পেসার মোহাম্মদ শামি। ক্রিকইনফোর খবর।
অস্ট্রেলিয়ার ভয়ঙ্কর বোলিং এ্যাটাকের বিরুদ্ধে ভিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, রবিন্দ্র জাদেজা, কেএস ভরত, শার্দুল ঠাকুররা কি গড়তে পারবেন ইতিহাস? ৪৪৪ রানের লক্ষ্যে পঞ্চম দিনে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামবে রোহত শর্মার দল। স্বাভাবিকভাবেই, ম্যাচ জিততে গেলে রেকর্ডবুকে ঝড় তুলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হবে ভারতকে। আর এই রান করার সামর্থ্য যে ভারতের আছে, সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহই নেই দলটির পেসার মোহাম্মদ শামির। চোখের পাতা না ফেলেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা সবাই শতভাগ বিশ্বাস করি যে, কাল আমরা ম্যাচটি জিতবো। বেশ কয়েক বছর ধরে বিদেশের মাটিতে যেভাবে খেলছি তাতে বিশ্বাস করি, সব সময়ই ম্যাচ জয়ের একটা না একটা উপায় আমরা বের করে ফেলবো।
৫ম দিনের খেলা শুরুর ৪০ ওভার পর নেয়া হবে নতুন বল। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের প্রথম ঘণ্টা ভিরাট কোহলি-অজিঙ্কা রাহানে অবিচ্ছিন্ন থেকে পার করে দিতে পারলে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বোধহয় ভারতের জন্য আর অনতিক্রম্য থাকবে না। চতুর্থ ইনিংসে ইতিবাচক ব্যাটিং করেছেন ভারতের সব ব্যাটারই। রোহিত শর্মা ও চেতেশ্বর পুজারার আউট হওয়ার ধরনে হয়তো তাড়াহুড়ো ছিল। এই দুই ব্যাটার হয়তো বলবেন, এসব শট তারা ভালোই খেলতে পারেন। তবে পরিস্থিতির বিচারে রোহিতের প্যাডেল সুইপ কিংবা পুজারার আপার কাটের প্রচেষ্টা দিন শেষে খুব বেশি মার্কস পাবে না।
তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুই ব্যাটার ইতিবাচক ছিলেন বলেই ৭৭ বলে উঠেছে ৫১ রান। তবে দ্রুত দুই উইকেটের পতনে ১ উইকেটে ৯২ রান থেকে ভারত পরিণত হয় ৩ উইকেটে ৯৩ রানের দলে। সেখান থেকে ভারতকে যে গুড়িয়ে দিতে পারেনি কামিন্স-বোল্যান্ডরা তার কারণ কোহলি-রাহানে। আগের ব্যাটারদের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের ধারা বজায় রাখেন তারা। বল স্ট্রাইকিং ছন্দ দেখা গেছে দুই ব্যাটারের ব্যাটেই। কন্ডিশনও অজি বোলারদের খুব বেশি সহায়তা করেনি। প্রথ তিন ইনিংসে যেরকম অসমান বাউন্স দেখা গেছে, চতুর্থ ইনিংসে তা অনেকটাই উধাও। কোহলি ও রাহানের ব্যাটিংয়ের কন্ট্রোল পার্সেন্টেজও প্রায় শতভাগ ছুঁইছুঁই।
শেষ সেশনের শেষ কয়েকটি ওভার বিপদ ঘটতে না দিয়ে কাটান তারা। ভারতীয় দর্শকরাও মনে আনন্দ নিয়ে ১৯৭৫ সালের ব্লকবাস্টার মুভি শোলে ‘র ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে’ (এই বন্ধুত্ব আমরা কখনোই ভাঙবো না) গানটি গাইতে গাইতে ছেড়েছেন ওভালের গ্যালারি। কোহলি-রাহানের বন্ধুত্ব না হোক, পঞ্চম দিনের শুরুতেই তাদের জুটি ভেঙে দেয়ার জন্য যে তৎপর থাকবে অস্ট্রেলিয়া, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টেস্টের পঞ্চম দিনের ক্ল্যাসিক এক দ্বৈরথের জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সকল উপাদান নিয়েই যে বসে আছে ওভাল! ভারতের বিশ্বরেকর্ড নাকি প্রথম দিন থেকে চলতে থাকা অজি আধিপত্য়ের সফল মঞ্চায়ন- টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের শেষদিনে অনেক নাটক ও রোমাঞ্চের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: শেষ দিনে ভারতের প্রয়োজন ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৭ উইকেট
/এম ই
Leave a reply