আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে রেকর্ড গড়ে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। দলীয় ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। ফলে আফগানিস্তানের সামনে ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড়ায়। টেস্ট ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের দেয়া সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল যেভাবে খেলে যাচ্ছিলো তাতে টেস্টের ইতিহাসে কোনো দলকে সর্বোচ্চ রানের টার্গেট তথা ৮৩৬ রানের টার্গেট দেয়া মোটেও দুঃসাধ্য ছিল না। ৩য় ইনিংসে ৩য় বারের মতো ৪০০’র বেশি সংগ্রহ করলো বাংলাদেশ।
২৩৬ রানের বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। আর তাতেই আফগানদের সামনে দাঁড়ায় ৬৬২ রানের পাহাড়সম টার্গেট। যা টপকাতে হলে আফগানিস্তানকে ভাঙতে হবে একাধিক রেকর্ড।
বিশাল রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে আফগানরা। সফরকারীদের ২য় ইনিংসের প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন ইব্রাহিম জাদরান। শরিফুলের ফুল লেন্থের ডেলিভারি ফ্লিক করার চেষ্টা করলেও ব্যাটে লাগাতে পারেননি ইব্রাহিম। বল আঘাত হানে তার প্যাডে। সাথে সাথে শরিফুলের জোরালো আবেদন। তাতে সাড়া না দিয়ে পারেননি আম্পায়ার।
শরিফুলের দেখানো পথেই যেনো হাঁটলেন আরেক টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান তাসকিন। ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান আব্দুল মালিককে। তাসকিনের গুড লেংথের ডেলিভারিটি কভার ড্রাইভ করে খেলার চেষ্টা করেছিলেন মালিক। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লাগলে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন ৫ রান করা মালিক।
এর আগে, মিরপুর টেস্টে ২য় দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, ৩য় দিন সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান। ৩৭৬ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে এই জুটিতে সাড়ে চারশোর কাছাকাছি লিড নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে টাইগাররা। ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন শান্ত-জাকির।
জাকিরের তুলনায় শান্ত একটু বাড়তি আক্রমণাত্মক ভাবেই রান যোগ করতে থাকেন স্কোরবোর্ডে। দলকে দেড়শোর ঘরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে শান্ত হাঁটতে থাকেন সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু নব্বইয়ের ঘরে ঘিরে তিনি সঙ্গী হারান। রান আউটে কপাল পুড়ে জাকিরের। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে তাকে। ৭১ রানে আউট হন তিনি।
সঙ্গী রান আউটে বিদায় নিলেও মুমিনুল হককে নিয়ে নিজের টানা দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন শান্ত। রহমত শাহ’র ওভারকে পায়ের কাছে পাওয়া বল হালকা করে খেলে সিঙ্গেল নিয়ে এই ক্রিকেটার পৌঁছে যান আরও একটি সেঞ্চুরিতে। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি গড়েন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তিটি ছিল শুধু মুমিনুল হকের। ক্রিকেট ইতিহাসের ৯১তম ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি এখন শান্তর। এরপর ১২২ রান নিয়ে লাঞ্চ থেকে ফিরে বেশি কিছু করতে পারেননি শান্ত। জহির খানের করা ইয়র্কার ডেলিভারিতে অন সাইডে ব্যাট চালিয়েছিলেন শান্ত।
সেখানে সহজ ক্যাচ তালু বন্দী করেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। যদিও আউটটি নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। ব্যাটে লাগার পর বল মাটিতে লেগেছে কিনা তা দেখার জন্য থার্ড আম্পায়ারের কাছে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পাঠান ফিল্ড আম্পায়াররা। থার্ড আম্পায়ার পর্যবেক্ষণ করে শান্তকে আউট দেন। আর তাতেই শেষ হয় শান্তর ১২৪ রানের ইনিংস। আর তাতে মুমিনুল হকের সঙ্গে তার ৮৬ রানের জুটি ভাঙে।
এরপর অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে জহির খানের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন মুশফিক। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলেই স্লগ সুইপে দারুণ এক ছক্কা মেরেছিলেন মুশফিক। পরের বলটি রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় ব্যাটে ঠিকঠাক করতে পারেননি তিনি। বল গ্লাভসে লেগে স্লিপে ক্যাচ হয়। এরপর লিটন দাসকে নিয়ে ৬৭ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল।
৪৮ রান নিয়ে চা পানের বিরতিতে গিয়েছিলেন লিটন। সেখান থেকে ফিরেই জহির খানকে স্কুপ করে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। এরপর আজমতউল্লাহ আহমদজাইকে আপার কাটে চার মেরে ২৬ মাস আর ২৬ ইনিংস পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। খানিক বাদেই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। লিটন ৬৬ ও মুমিনুল ১২১ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।
/আরআইএম
Leave a reply