‘ম্যানেজ করে’ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সাগরে চলছে মাছ শিকার

|

কোস্টগার্ডের অভিযানে আটককৃত জেলেরা।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, পটুয়াখালী:

বঙ্গোপসাগরে চলছে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু, কে শোনে কার কথা! নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জেলেদের নামিয়ে দিচ্ছে সাগরে। জানা গেছে, প্রতিদিন ট্রলার প্রতি ৩০ হাজার টাকা দিতে হয় ব্যবসায়ী নেতাদের। শুধুমাত্র তাহলেই ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করে তীরে ফিরতে পারেন জেলেরা।

পটুয়াখালীর আলীপুর ও কুয়াকাটার মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। যার সত্যতা মিললো বুধবার (১৪ জুন) রাতে কোস্টগার্ডের অভিযানে। ওই রাতে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ৩টি ফিশিং ট্রলার জব্দসহ ৩২ জন জেলেকে আটক করে কোস্টগার্ড।

এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কে এম শাফিউল কিঞ্জল জানান, বুধবার রাতে অভয়াশ্রম রক্ষা অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় কোস্টগার্ড। এ সময় আন্ধারমানিক নদী সংলগ্ন মোহনায় ৩টি ফিশিং বোট তল্লাশি করে ১০ লাখ মিটার সুতার জালসহ ৩৩০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ (ইলিশ, লইট্টা ও চন্দনা) জব্দ করা হয়। আটক করা হয় ওই তিন ট্রলারে থাকা ৩২ জেলেকে।

লে. শাফিউল কিঞ্জল আরও জানান, পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৩১ হাজার টাকায় জব্দকৃত মাছগুলো বিক্রি করা হয়। এছাড়া আটককৃত তিন ট্রলারের মালিককে মোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা গেছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের অবাধ প্রজননের লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে দেশীয় জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু, প্রতি বছরের মতো এবারও গতানুগতিকভাবে শুধুমাত্র কাগজে কলমে আর মিটিং ডেকেই এ কার্যক্রম শুরু করেন মৎস্য অফিস সংশ্লিষ্টরা। তবে, সরকার আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা বেশিরভাগ সময়ই মানতে চান না জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও প্রায়ই অবাধে মাছ শিকারে সাগরে যেতে দেখা যায় তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই যেনো অকার্যকর। বিশেষ করে কুয়াকাটার গঙ্গামতি আর লেম্বুরবন এলাকায় বেশ নিয়মিতই দেখা যায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার দৃশ্য। জেলার প্রতিটি সাগর মোহনায় গভীর ও অগভীর এলাকায় অনেকটা ফ্রি স্টাইলেই চলছে মাছ শিকার। প্রায় প্রতিদিনই অন্তত পঞ্চাশটি ফিশিং বোটসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা যায় এসব এলাকায়। মাছ পরিবহন, আহরণ, বেচাকেনা সব কিছুই চলছে নিয়মমাফিক।

অভিযোগ আছে, আলীপুরের কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী ওই এলাকার দুজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সকল মহলকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে চলেছে। এজন্য ট্রলার প্রতি ৩০ হাজার টাকা দিতে হয় ওইসব ব্যবসায়ী নেতাদের। ফলে, অধিক মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের দাদন দেয়া জেলেদের জোর করে হলেও মাছ শিকারে বাধ্য করাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যাকুয়াকালচার এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক। খুব দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত আছে। গত ২০ মে থেকে চলমান অবরোধেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকার করছিলো এমন ১৫টি ট্রলারের মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৩টি বরফ কল ও ৪টি মাছের আড়ৎ মালিককেও জরিমানা করা হয়েছে। তবে অব্যাহত অভিযানের মধ্যেও কেউ কেউ চুরি করে রাতের আঁধারে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছে বলে শুনেছি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply