ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসরের ফাইনালিস্ট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরমধ্যে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে টানা দুই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নও হয় ক্যারিবিয়ানরা। ক্লাইভ লয়েড-ভিভ রিচার্ডসের ব্যাট শাসন করতো বিশ্ব ক্রিকেট। প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটারদের আতঙ্ক ছিলেন জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শালরা। কিন্তু তাদের উত্তরসূরীদেরই এবারের আসরে থাকতে হচ্ছে দর্শক হয়ে। বাছাইপর্ব উৎরাতে না পারায় প্রথমবারের মতো ক্যারিবিয়ানদের ছাড়াই মাঠে গড়াবে ভারত বিশ্বকাপ। উইন্ডিজদের এমন পতন মেনে নিতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। বলেছেন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ না করলে সেরা খেলোয়াড় তৈরির আশা করা যায় না। অন্যদিকে, নিজ দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে বোর্ডের চিন্তা ভাবনা পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন ইয়ান বিশপ। স্কাই স্পোর্টসের খবর।
১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হারের পর অনেক কিছুই বদলেছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে। একটা সময় ক্রিকেটে রাজত্ব করা সেই উইন্ডিজকে এখন পরীক্ষা দিতে হয় বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উৎরানোর। তবে দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘায়িত হয় যখন আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা পূরণে ব্যর্থ হয় দলটি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপপর্বে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল ক্যারিবীয়রা। তখনই বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে সংশয়ে পড়তে হয় তাদের। সেই শঙ্কার ষোলোকলা পূর্ণ করে স্কটল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে উইন্ডিজকে।
ক্রিকেটে শাসন করা দলটির এমন পতন নিয়ে অ্যাশেজ সিরিজে ধারাভাষ্য দিতে আসা রিকি পন্টিংয়ের কণ্ঠেও বেদনার সুর। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, সেই দিনগুলো এখন অতীত। পুরো ক্রিকেটকে তারা শাসন করেছে। তাদের একচেটিয়া দাপটে প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটাররা থাকতেন আতঙ্কে। কিন্তু কী হলো এটা? উইন্ডিজ কত দ্রুত নেমে এসেছে, পতন হয়েছে তাদের; ভাবা যায়! ২০ বছর আগেও কে ভাবতে পেরেছিল এমনটা হবে?
রিকি পন্টিং আরও বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে যে, যদি আপনি উন্নয়নের যথাযথ ক্ষেত্রে দৃষ্টিপাত না করেন, তৃণমূলে বিনিয়োগ না করেন এবং তরুণ খেলোয়াড়দের গঠনের ব্যাপারে মনোযোগী না হন তাহলে কেবল বিশ্বসেরা খেলোয়াড় তৈরির আশা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না! এসব ঘটলে ফলাফল কী দাঁড়ায় তা তো দেখাই যাচ্ছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এখন আর আগের মতো জৌলুস নেই উইন্ডিজে। তরুণদের বড় একটি অংশ অ্যাথলেটিক্স ও বাস্কেটবলে আগ্রহী হওয়ায় রঙ হারাচ্ছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ক্রিকেট। আর সাবেক ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ বলেছেন, প্রতিভা থাকলেও দুর্বল কাঠামোর কারণে পিছিয়ে পড়ছে ক্রিকেট। তিনি বলেন, দেশে এখনও ক্রিকেটকে ভালোবাসেন সমর্থকরা। অন্তত তাদের জন্য বোর্ডের চিন্তাভাবনা পাল্টানো দরকার। কোচ কিংবা অধিনায়ক বদল করে কিছু হবে না। একদম তৃণমূল স্তর থেকে পরিবর্তন প্রয়োজন।
ক্যারিবিয়ান জাতীয় দল নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন বিশপ। ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন গুরুত্ব না থাকায় আইপিএলসহ সারা বিশ্বের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে চলে যান ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা। যার চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে এবার, বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা হারিয়ে।
আরও পড়ুন: প্রথমবারের মতো উইন্ডিজদের ছাড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ
/এম ই
Leave a reply