আল মাহফুজ:
“তখোন আকাশ আলো হয়তো বা মিলে যায়, মেলে
তখোন পৃথিবী হয়তো বার বার ফিরে পায় তারে
তখোন তোমারে পাবো, দেখা হবে, ফের দেখা হবে!”
আবুল হাসানের এই কবিতার লাইনগুলো হয়তো একান্ত প্রেমের, কিন্তু লাইনগুলো ফুটবল মাঠের কোনো জাদুকরের বিদায়ের ক্ষেত্রেও হয়তো বেখাপ্পা ঠেকে না। সাময়িক বিদায়ে চোখের জলের অজুত গল্প লেখা হলেও পৃথিবী হয়তো তাকে চিরন্তনভাবে ফিরে চাইবে। পৃথিবী হয়তো আবার তার সাথে দেখা করিয়ে দেবে সবুজ ঘাসের কোনো প্রান্তর।
বলা হচ্ছে কিংবদন্তি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফনের কথা। বুধবার (২ আগস্ট) ৪৫ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি গোলকিপার গ্লাভসজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানা এই ‘সুপারম্যান’কে আর কখনও গোলপোস্টের নিচে দেখা যাবে না। এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে বুফন জানিয়ে দিলেন, এ যাত্রায় তার আর ফেরা হচ্ছে না। ‘এখানেই সমাপ্তি’ লিখে জুড়ে দেন বর্ণিল ক্যারিয়ারের নানা মুহূর্তের ঝলকানি দিয়ে তৈরি একটি ভিডিও।
পার্মার হয়ে তার পেশাদার ক্যারিয়ারের সূচনা। সেখানে অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৫ সালে, ১৭ বছর ২৯৫ দিন বয়সে। এর পর ২০০১ সালের রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে জুভেন্টাসে আসেন বুফন। মাঝখানে পিএসজি হয়ে ২০২১ সালে শৈশবের সেই ক্লাবে পার্মাতেই ফেরেন। তার দল সিরি বি’তে খেলে। দুই মৌসুমজুড়ে পার্মাকে ইতালির শীর্ষ লিগে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেও পারেননি বুফন। তবে শৈশবের ক্লাবের তাবু থেকে বিদায় নিতে পারাটাও নিশ্চয়ই কম আনন্দের নয়।
গ্লাভসের এই জাদুকরের রয়েছে ২৮ বছরের ক্যারিয়ার, ১১৫১ ম্যাচ আর ২৯ ট্রফির দীর্ঘ আখ্যান। তার ঝুলিতে রয়েছে অজস্র রেকর্ড। ইতালির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। রয়েছে সিরি আ’তে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এবং বেশি সময় গোল হজম না করার রেকর্ড। ইতালির শীর্ষ লিগে সবচেয়ে বেশি ক্লিনশিটও তারই দখলে।
২০০৬ বিশ্বকাপসহ অসংখ্য শিরোপা জয় করেছেন। শুধু ইতালিয়ান লিগ সিরি আ’র শিরোপাই জিতেছেন সর্বোচ্চ ১০ বার। জয় করেছেন পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ানও। তিনবার খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। জুভেন্টাসের হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৯টি লিগ শিরোপা জেতার পাশাপাশি সুপারকোপা ইতালিয়া ও কোপা ইতালিয়া জিতেছেন। তবে জুভেন্টাসের সমর্থকেরা সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গোলকিপারকে মনে রাখবে আরও একটি কারণে। ২০০৬ সালে জুভেন্টাস ‘ক্যালসিওপলি’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সিরি বি’তে নেমে গেলেও ক্লাব ছাড়েননি বুফন। তাই বুফন তাদের কাছে ভালোবাসার আরেক নাম।
কিন্তু একটি অপূর্ণতার ক্ষত হয়তো দগদগে হয়ে বাজবে তার বুকে। সেটা হলো– দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনদিনই উঁচিয়ে ধরা হয়নি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা এই গোলরক্ষক বিশ্বকাপ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার চিরদুঃখটা আজীবন হয়তো তাকে পোড়াবে।
/এএম
Leave a reply