ব্যুরো চিফ, কুমিল্লা:
এমএলএম ব্যবসার নামে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)। রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে এমএলএম কোম্পানির এই প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ। বলা হচ্ছে, প্রতারণা করা এমটিএফইর প্রতিষ্ঠাতা দুবাই প্রবাসী মাসুদ আল ইসলাম।
মাসুদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের জাহাপুর। প্রতারণার কাহিনী জানাজানির পর লাপাত্তা পরিবারের সদস্যরা। তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি পরিবারের কাউকে। প্রতিবেশীরা জানায়, সোমবার (২১ আগস্ট) চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি ছেড়েছে সবাই।
স্থানীয়রা জানায়, একসময় ভাই মাহবুবের সাথে আইটি পেশায় জড়িত ছিলো মাসুদ। পারদর্শী ছিলো হ্যাকিংয়ে। বিকাশ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার ভাইয়ের নামে। এর জের ধরে চট্টগ্রামে হত্যার শিকার হন মাসুদের ভাই মাহবুব।
জাহাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ শওকত আহমেদ বলেন, মাহবুবের এই প্রতারণার ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। যেহেতু এটা সরকারি কোনো ইস্যু ছিল না, ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ের ইনভেস্টমেন্ট ছিল; তাই এ ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। তবে বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এমটিএফইর তথাকথিত ‘টিম লিডারদের’ অনেকের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদের একজন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের সাইফুল। তিন শতাধিক মানুষের টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সাইফুলের স্ত্রী ‘সিইও পদপ্রত্যাশী’ পাপিয়াকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবার মতো ভুক্তভোগী আমি এবং আমার স্বামী। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পাপিয়াও এই প্রতারণার সাথে জড়িত।
প্রতারণা জানাজানির পর গা ঢাকা দিয়েছেন টিম লিডার বা সিইওরা। এক ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারী জানান, আমাকে ২ মাসের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। আমি ৩টি আইডি খুলেছিলাম। একটাতে ইনভেস্ট করেছি ২৫ হাজার ৫শ। বাকি দুইটাতে সাড়ে সাত হাজার। আরেক বিনিয়োগকারীর বক্তব্য, আমাকে মাঝেমাঝে অফিসে ডেকে কথাবার্তা বলতো তারা। এক পর্যায়ে আমাকে ফুঁসলিয়ে একাউন্ট খুলিয়ে বলেছে যে, এটা (এমটিএফই) কখনও বন্ধ হবে না।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রবাসী মাসুদ আল ইসলাম দুবাই থেকে এক ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, অ্যাপটির মালিক তিনি নন। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, তিনি শুরু করার পূর্বে দশ লাখের বেশি মানুষ এমটিএফইতে ছিল। তিনি সিইও হওয়ার আগে বাংলাদেশে এমটিএফইর আরও দুজন সিইও ছিল।
শুধু কুমিল্লা নয়, সারা দেশেই ছড়ানো ছিটানো ছিল এই চক্রের জাল। গা ঢাকা দিয়েছে প্রায় চারশতাধিক সিইও। ভুক্তভোগীরা পাচ্ছেন না তথাকথিত টিম লিডারদের দেখা। ফলে আইনি ব্যবস্থা নিতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
/এএম
Leave a reply