এডিসি সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় এই প্রথম মুখ খুলেছেন এডিসি হারুন-অর-রশীদ। তিনি বলেছেন, আমাকে প্রথম ঘুসি মারে এপিএস আজিজুল হক মামুন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সেদিনের ঘটনাবলি বর্ণনা করেছেন। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তার পবিত্র কুমারের কাছে যাই। তখন বেলা ২টার দিকে আমাদের এডিসি ক্রাইম-১ (সানজিদা আফরিন) ফোন করে বলেন, তার চেস্ট পেইন। তাই বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার প্রফেসর আব্দুর রশিদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া যায় কিনা।
তখন আমি রমনা থানার ওসি আবুল হাসানকে বলি, একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য। আবুল হাসান সাহেব পরবর্তীতে আমাকে জানান, সন্ধ্যা ৬টায় একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেয়া হয়েছে। আমি সেটা এডিসি ক্রাইম-১’কে জানাই। তিনি সন্ধ্যা ৬টায় হসপিটালে চলে যান।
এডিসি হারুন বলেন, পরবর্তীতে প্রফেসর ড. আব্দুর রশিদ স্যার বারডেমের কনফারেন্স বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে সময় দিতে পারছিলেন না। কিন্তু এডিসি সানজিদা সেখানে গিয়ে অসুস্থ বোধ করছিলেন। এরপর সানজিদা আমাকে বলেন, ‘স্যার এখানে ডাক্তার সম্ভবত ব্যস্ত আছেন, তিনি আজকে সময় দিতে পারবেন না। কিন্তু আমি অসুস্থ বোধ করছি।’ তখন আমি সেখানে যাই। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর ডাক্তার সানজিদাকে দেখেন।
হারুন আরও বলেন, ডাক্তাররা পরবর্তীতে এডিসি সানজিদাকে তিনটি টেস্ট করান– ইসিজি, ইকো ও ইটিটি। যখন ইটিটি রুমের ভেতরে পেশেন্ট (এডিসি সানজিদা) ছিলেন, আমি তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। তখন আজিজুল হক মামুন (এডিসি সানজিদার স্বামী) এবং তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন আসেন। তিনি পেশেন্টের রুমে যান, পেশেন্ট দেখেন। দেখে বাইরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার বাম চোখের ওপরে একটা ঘুসি মারেন।
হারুন বর্ণনা করেন, আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। তিনি আমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘ভাই, আপনি আমাকে কেন মারলেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। এটা তো ডেকোরামের পর্যায়ে পড়ে না।’ তখন তার সঙ্গে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও আমার ওপরে চড়াও হয়। তারা আমাকে জোরপূর্বক ইটিটি রুমের ভেতরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। সেখানে পেশেন্টের সঙ্গে কথা হয়। তারা ওখানেও আমাকে মারধর করে। পরে আমি আত্মরক্ষার্থে শাহবাগ থানা পুলিশকে কল দিলে পুলিশ এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এডিসি সানজিদা আফরিনের স্বামী আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। জানা যায়, মামুনের সঙ্গে ছিল ছাত্রলীগের দুজন নেতা। ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, এরপরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেধ এডিসি হারুন-অর-রশীদ। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।
পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, তাকে ডিএমপি থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর এই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদিন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও বদলি করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তরে।
সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর হারুনকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সরিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেদিন হারুন কাণ্ডে গণমাধ্যমের কাছে প্রথমবারের মতো মুখ খোলেন এডিসি সানজিদা আফরিনও। সেখানে স্বামীর পক্ষে অবস্থান না নিয়ে বরখাস্ত এডিসি হারুনের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে তাকে। পরবর্তীতে ডিএমপি সূত্র থেকে জানা যায়, সানজিদাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে ঢাকার বাইরের কোথাও বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ নিয়ে আদেশ দেবে পুলিশ সদর দফতর। এডিসি সানজিদা আফরিন রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী।
/এএম
Leave a reply