শিখ নেতা হত্যাকাণ্ড: যুগ যুগ ধরে চলমান ‘গুপ্তহত্যা’

|

নিজ্জারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ ছিল ভারতের। ছবি: সংগৃহীত

মোস্তফা মাহমুদ:

কানাডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতার হত্যাকাণ্ড ঘিরে যখন উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি, তখন নতুন করে আলোচনায় গুপ্তহত্যা। অনেক দেশের বিরুদ্ধেই আরেক দেশে গিয়ে শত্রুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য অন্যদেশে গিয়ে শত্রুকে মারার সবচেয়ে বেশি কুখ্যাতি ইসরায়েলের।

সৌদি আরবের আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। অক্টোবরের দুই তারিখ ব্যক্তিগত কাজে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি আরবের কনস্যুলেটে গিয়ে গুপ্তহত্যার শিকার হন সৌদির শাসকদের কট্টর সমালোচক এই সাংবাদিক।

অভিযোগ উঠে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে জামালকে হত্যা করে সৌদির বিশেষ এক স্কোয়াড। আরেক দেশে কিলিং মিশন পরিচালনার এই ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়েন সালমান। শুরু হয় সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েন।

নিজ দেশের জন্য হুমকি মনে হলে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার এই কৌশল অবশ্য অনেক দেশই অবলম্বন করেছে। পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বিরুদ্ধেও। তার সৎ ভাই কিম জং নামের রহস্যজনক মৃত্যু হয় মালয়েশিয়ায়। এয়ারপোর্টেই নামের শরীরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ উঠে দুই নারীর বিরুদ্ধে। এই নাম ছিলেন সংস্কারপন্থী। বংশ পরম্পরায় দেশটির ক্ষমতা দখলের যে রীতি, তার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।

অবশ্য গত কয়েক দশকে সবচেয়ে বেশি গুপ্তহত্যা ঘটিয়েছে ইসরায়েল। ২০১৮ সালে প্রকাশিত দেশটির সাংবাদিক রনেন বার্গমেনের বইয়ে দাবি করা হয়, অবৈধ দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায় তিন হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’। ফিলিস্তিনি মুক্তিকামীরাই মোসাদের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে বেশি। তবে হুমকি মনে হলে জার্মানি, কানাডার মতো বন্ধু দেশের নাগরিকদেরও ছাড় দেয়নি ইসরায়েল।

আরেক দেশে গিয়ে শত্রুকে হত্যার কুখ্যাতি আছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ এবং বিলুপ্ত হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগের গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’র বিরুদ্ধেও। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই দুই বাহিনীর বিরুদ্ধে পরস্পরের শত্রুকে হত্যার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

নিজের সমালোচক আর শত্রুকে সরিয়ে দেয়ার কুখ্যাতি আছে রুশ প্রেসিডেন্টে ভ্লাদিমির পুতিনেরও। নিজ ভূখণ্ডের পাশাপাশি অন্য দেশেও কিলিং মিশন পরিচালনার অভিযোগ আছে তার এজেন্টদের বিরুদ্ধে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর ‘ওয়াগনার’ প্রধান প্রিগোঝিনসহ অন্তত এক ডজন রুশ নাগরিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে, যার নেপথ্যে অনেকেই পুতিনকে দায়ী করেন।

নিজ্জারের মৃত্যুর পর বিক্ষোভ হয় ভারত বিরোধী ও ভারত সমর্থকদের মধ্যে। ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি গুরুদুয়ারার বাইরে হত্যা করা হয় ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হারদিপ সিং নিজ্জারকে। ঐ নেতাকে গুলি ছোঁড়ে গাড়িতে বসে থাকা দুই মুখোশধারী। নিজ্জারের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা ছিল। ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে শিখদের জন্য স্বাধীন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন নিজ্জার।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মন্তব্য করেন, শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে। পরের দিন (১৯ সেপ্টেম্বর) তার এই দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ভিত্তিহীন অপবাদ।

ঘটনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে নজিরবিহীন কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। শুরুতে কানাডা তার দেশ থেকে ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে চলে যেতে বলার পর কানাডিয়ান কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply