ফিরে দেখা বিশ্বকাপ ২০১৯: কিউইদের কাঁদিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ইংল্যান্ডের

|

ছবি: সংগৃহীত

২০০৬ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে স্বাগতিক দেশের মর্যাদা দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের নিলাম প্রক্রিয়া থেকে তাদের আবেদন প্রত্যাহারের ফলে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল খেলাটি ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৯৯ সালের পর পঞ্চমবারের মতো লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল ম্যাচ সমতায় শেষ হওয়ায় সুপার ওভারের লড়াইয়েও হয়নি নিষ্পত্তি। ম্যাচ এবং সুপার ওভার মিলিয়ে বেশি বাউন্ডারি মারায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ইংল্যান্ড।

এই আসর পূর্ববর্তী সমস্ত আসরকে ছাড়িয়ে যায়। রেকর্ডের পর রেকর্ড ব্রেক হয় ২০১৯ বিশ্বকাপে। দলীয় সর্বোচ্চ রান আসে ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ইংল্যান্ড আফগানিস্তানকে ৩৭৬ রানের টার্গেট দেয়। এই ইনিংসের কল্যাণে ওয়ানডেতে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫টি ছক্কা মারে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। এই ম্যাচে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা (১৭) হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন এউইন মরগান।

এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড করেন রোহিত শর্মা। ৫টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান। সর্বোচ্চ ৭টি অর্ধশতক করে তিনি শচীনের রেকর্ডে ভাগ বসান।প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০’র বেশি রান এবং ১০ উইকেট শিকার করার কীর্তি গড়েন সাকিব আল হাসান। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ড ভেঙ্গে দেন মিচেল স্টার্ক।

২০১৯ বিশ্বকাপের দলের সংখ্যা রাখা হয় ১০টি। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখ মোতাবেক আইসিসি র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ আট দল (স্বাগতিক ইংল্যান্ডসহ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। অন্য দুই দলের অন্তর্ভুক্তি ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। এতে আইসিসির সহযোগী ও অনুমোদনলাভকারী সদস্য দেশগুলোরও অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছিল।

১০ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতা সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। জুন, ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান দলকে টেস্ট মর্যাদা প্রদানের ফলে টেস্ট দলের সংখ্যা ১০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২ হয়। এর ফলে প্রথমবারের মতো সকল টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত দলের অংশ গ্রহণ ছাড়াই ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়।

বাছাইপর্বের চূড়ান্ত খেলায় উইন্ডিজকে পরাভূত করে আফগানিস্তান দল বিজয়ী হয়। উভয় দলই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। অন্যদিকে, ১৯৮৩ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা থেকে বঞ্চিত হয় জিম্বাবুয়ে। আয়ারল্যান্ড দলেরও সুযোগ হয়নি সেবারের আসরে খেলার।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল কেমন হয়? ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে এমন প্রশ্নের উত্তরে হয়তো অনেকেই বলতেন, ‘ম্যাড়ম্যাড়ে, ক্লিশে, একপেশে’। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের এই ম্যাচের পর অনেকের ধারণা বদলে যায়। কেবল নাটকীয় বললেও হয়তো কম বলা হবে, এক কথায় অবিশ্বাস্য ছিল এই ম্যাচের শেষভাগ।

ইংল্যান্ডের শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান। বল হাতে নেন ট্রেন্ট বোল্ট। উইকেটে দাঁড়িয়ে বেন স্টোকস প্রথম দুই বলে স্ট্রাইক ছাড়েননি, কোনো রানও নেননি। তৃতীয় বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন, কেন তিনি স্ট্রাইক ছাড়েননি। তবে ম্যাচের মোড় ঘোরে পরের বলে, যেখানে দৌঁড়ে মাত্র দুটি রান আসার কথা, সেখানে বেন স্টোকস ডাইভ দেয়ার পর বল ব্যাটে লেগে চার হয়ে যায়, সেই বলে মোট রান আসে ছয়টি।

এনিয়ে খানিকটা খটকা ছিল মাঠেও। বেন স্টোকস সাথেসাথে হাত উঠিয়ে জানান দেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বলে ব্যাট লাগাননি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে জমজমাট ফাইনাল বলাই যায় এটাকে। প্রথমবারের মতো টাই, প্রথমবারের মতো ম্যাচ গড়িয়েছে সুপার ওভারে।

ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় এই ফাইনালে সুপার ওভারও টাই হওয়ায় মূলত পুরো খেলায় বাউন্ডারি বেশি থাকায় চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply