আবারও ইরাকে কুর্দিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে তুরস্ক। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দেশটির উত্তরাঞ্চলে বোমা হামলা চালায় তুর্কি বিমান বাহিনী। খবর রয়টার্সের।
টার্গেট করা হয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) আস্তানা। রাত আটটার দিকে শুরু হয়ে একযোগে অভিযান চলে মেটিনা, গারা, হাকুর্ক, কানদিল ও আসোস অঞ্চলে। গুড়িয়ে দেয়া হয় পিকেকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৬টি স্থাপনা।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। আমলে নেয়া হয় পরিবেশ দূষণের বিষয়টিও। কুর্দিবিরোধী এই অভিযান আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ১ অক্টোবর আঙ্কারায় পার্লামেন্ট এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করে পিকেকে। এরপরই ইরাকে কুর্দিবিরোধী অভিযান শুরু করে তুরস্ক। দেশজুড়েও চালাচ্ছে কুর্দি নির্মূল অভিযান। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশিতে ধরপাকড়ের শিকার হাজারের বেশি মানুষ।
উল্লেখ্য, তুরস্ক ও সেদেশের কুর্দিদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাসটা অনেক পুরোনো। তুরস্কের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ ভাগ জাতিগতভাবে কুর্দি। একশ বছর আগে কুর্দিদের বিক্ষোভের উত্থানের সময় অনেক কুর্দি পুনর্বাসিত হয়। কুর্দিদের জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করা হয়। সেসময়ে তাদের বলা হতো ‘পাহাড়ি তুর্কি’। ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওচালানের নেতৃত্বে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) গঠন করা হয়, যার প্রধান দাবি ছিল তুরস্কের মধ্যে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে তারা। এর জেরে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং লাখ লাখ কুর্দি বাস্তুচ্যুত হয়।
পরবর্তীতে, স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসে পিকেকে। নব্বইয়ের দশকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখে তারা। ২০১৩ সালে যুদ্ধবিরতির সমঝোতায় আসে দুপক্ষ। কিন্তু ২০১৫ সালে তা ভেস্তে যায়। কারণ, সে বছরের জুলাইতে কুর্দি অধ্যুষিত শহর সুরুকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ জন তরুণ অ্যাক্টিভিস্টের মৃত্যু হলে তুরস্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তার অভিযোগ আনে পিকেকে। তুরস্কের সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। অবশ্য আইএসকে সুরুকের ঐ বোমা হামলার জন্য দায়ী মনে করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় তুরস্কের সরকার পিকেকে ও আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে, যেটিকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত যুদ্ধ’ বলে দাবি করা হয়।
/এএম
Leave a reply