ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেন তিনি।
শাহজালালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ায় যাত্রীসেবায় যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। টার্মিনালের মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলির মাধ্যমে আকাশপথের যাত্রী ও বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সকে তাক লাগিয়েছে বাংলাদেশ। এই টার্মিনাল ব্যবহার করে ভোগান্তি এড়াতে পারবে যাত্রীরা।
এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধন করতে শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে নতুন টার্মিনালে প্রবেশ করেন সরকারপ্রধান। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান একদল শিশু শিল্পী। সেখান থেকে তাকে একটি চেক-ইন কাউন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। চেক-ইন কাউন্টার থেকে তাকে একটি নমুনা বোর্ডিং পাস দেয়া হয়। এরপর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টার, সিকিউরিটি গেট, মুভিং ওয়াকওয়ে (স্ট্রেট এসকেলেটর) পরিদর্শন করেন তিনি।
এ টার্মিনাল চালু হওয়ায় তাতে মিলবে পার্কিং বে, নতুন কার্গো ভিলেজ সুবিধা। এতে রয়েছে উন্নত বিশ্বের আধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মতো সুবিধা।
দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার দুর্ভোগ কমাতে মূল সড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে টার্মিনালটি। গাড়ি নিয়ে দ্রুত প্রবেশ এবং দেশে আসা যাত্রীরা কম সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে রওনা দিতে পারবেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
এতে থাকছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি বহির্গমন চেক-ইন কাউন্টার, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টার। রয়েছে ৭০টির মতো বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার। থাকবে ৫টি স্বয়ংক্রিয় আগমনী চেক-ইনসহ ৫৯টি কাউন্টার। ৪০টি কেবিন ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার মেশিন।
এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে । বহুতল পার্কিংয়ে রাখা যাবে ১ হাজারের বেশি গাড়ি।
২০১৭ সালের শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই টার্মিনালের নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তখন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। খরচের বেশিরভাগ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।
নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন।
আওয়ামী লীগ সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম আলোচিত ও স্বপ্নের প্রকল্প এই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ। মূল ভবনসহ টার্মিনালটি পুরোদমে চালু হবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ।
বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজগুলো মূলত অপারেশন সংক্রান্ত। এজন্য আরও সময় লাগবে। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে রাত-দিন নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে। এদিকে, এই টার্মিনাল চালু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। একইসঙ্গে দেশের আকাশপথের যাত্রীরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
/এমএন
Leave a reply