ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের চালানো নজিরবিহীন হামলায় অবাক বিশ্ব। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবরুদ্ধ গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস জল, স্থল ও আকাশপথে ত্রিমুখী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের ওপর। আর এ হামলা নিয়ে ইসরায়েলের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য, এই হামলা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। ফলে এ ঘটনায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। খবর বিবিসির।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে। ফলে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেট এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমস্ত সোর্স মিলেও এই হামলার কোনো আঁচ পায়নি কেনো এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। কারণ ফিলিস্তিনি বিভিন্ন সংগঠনের অভ্যন্তরেও রয়েছে তাদের গুপ্তচর।
এছাড়া গাজা এবং ইসরায়েলের সীমান্তে রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা, গ্রাউন্ড মোশন সেন্সর এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যন্ত প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য। এছাড়াও এই ধরনের হামলা ঠেকাতে সীমান্তে এতসব আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হামাস সহজেই বুলডোজার দিয়ে কাঁটাতার ভেঙে, সমুদ্রপথে এবং প্যারাগ্লাইডিং করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। অথচ এমন হামলার বিষয়ে বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি ইসরায়েলি কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা নিরাপত্তা বাহিনী।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সশস্ত্রগোষ্ঠীর গতিবিধির ওপর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের রেকর্ড আছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনীর। এমনকি জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করে গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন নেতাকে বহনকারী গাড়িতে ড্রোন হামলা কিংবা মোবাইল বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাদের হত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে ইসরায়েল। অথচ এত কাছ থেকে হামাসের আক্রমণের খবর সঠিকভাবে পায়নি তারা। ফলে নিজ দেশেই প্রশ্নের সম্মুখীন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজনীতিকরা।
ইসরায়েলের নাগরিকদের প্রশ্ন, কীভাবে এত কাছ থেকে এ বিশাল হামলার পরিকল্পনা করলো হামাস। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালে ইসরায়েলের ওপর হামলার ঠিক ৫০-তম বর্ষপূর্তিতেই এমন আক্রমণের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার সামর্থ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, হামলার তথ্য পেয়েছিল ইসরায়েলি সংস্থাগুলো তবে তারা সেটি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনা যাই হোক, ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টিই ঘুরেফিরে সামনে আসছে।
কেনো দেশটির এত সমৃদ্ধ গোয়েন্দা সংস্থা হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হলো, তার সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না। এ নিয়ে মুখও খুলছেন না দায়িত্বরতরা। ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে, যা হয়তো লম্বা সময় ধরে চলবে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার কারণ খোঁজার চেয়েও এখন তেল আবিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতার ভেঙে চলা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং হামাসের কব্জায় থাকা ইসরায়েলের একাধিক অঞ্চলের মানুষকে মুক্ত করা। এ ক্ষেত্রে আলোচনা বা সশস্ত্র অভিযান যেকোনো পথই অবলম্বন করতে পারে ইসরায়েল।
তাছাড়া যেসব স্থান থেকে রকেটগুলো ছোড়া হচ্ছে, সেসব সাইটগুলোকেও নির্মূল করা ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি অনেকটাই অসম্ভব। কারণ খুব কম সময়ে যেকোনো স্থান থেকেই রকেট ছুড়তে পারে হামাস। সবগুলো স্থানকে তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে হামলা ঠেকানো খুব সহজ ব্যাপার না। হামাসের আহ্বানে হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই হামলায় যুক্ত হয় কিনা সেটিও তেল আবিবের অন্যতম প্রধান মাথাব্যথার কারণ।
এসজেড/
Leave a reply