মনিরুল ইসলাম:
দেশ ছাড়ছে তরুণরা। শুধু পড়াশোনার জন্য যাচ্ছে তা নয়, ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অধিকাংশ তরুণ। তাদের সঙ্গে যাচ্ছে মেধা-ও। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই মেধাশূন্য রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তাদের মতে, তরুণদের জন্য শিক্ষা, ভালো পরিবেশ, ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকলে তারা দেশ ছাড়বেই।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সনদ তুলতে সেখানে শত শত শিক্ষার্থী বা সাবেক শিক্ষার্থী ভিড় করেন, যারা বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শাখা সংশ্লিষ্টরা জানান, দিন দিন বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের অধীনে তো মেডিকেল কলেজ, সাত কলেজ ও নার্সিং কলেজও রয়েছে। বাইরে যেতে চাওয়া শীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।
পাঁচ বছর আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮২ শতাংশ তরুণ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। শুধু তাই নয়, এ দেশের মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ একটু প্রভাব-প্রতিপত্তি হলেই সন্তানদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন বিদেশে। এছাড়া, অবৈধভাবেও বিদেশে পাড়ি দেয়া তো রয়েছেই। এই অবস্থার কারণ কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, এক শ্রেণির শিক্ষার্থীর ইচ্ছা সরকারি চাকরি। আরেক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি পায় না কিংবা সেজন্য পড়াশোনার যে সিস্টেম তা পছন্দ করে না। তারা মনে করে, এজন্য পড়াশোনা বা ইকো-সিস্টেমটা তাদের জন্য উপযুক্ত না।
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, এক হচ্ছে, পড়াশোনার মান; আবার চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা তেমন পায় না। এছাড়া, আরও একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় দেশ ছাড়ছেন তরুণরা।
তাহলে কি এসব মেধাবী তরুণদের আটকানোর কোনো উপায় নেই? কেউ কেউ আবার দেশেই থাকছেন, উন্নত দেশে বড় চাকরির প্রস্তাব বা সুযোগ থাকা স্বত্বেও। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মাইনুল হোসেন, আমেরিকায় বিলাসী জীবন এবং বড় চাকরির প্রস্তাব থাকার পরও তিনি দেশে ফিরেছেন শিক্ষকতার নেশায়। অবশ্য এ সংখ্যাটা একেবারে হাতেগোনা।
এই শিক্ষকের মতে, বিদেশে থেকেও দেশে অবদান রাখা যায়। তবে, নীতিনির্ধারকদের চেষ্টা থাকতে হবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশ পড়ুয়াদের দেশে ফিরিয়ে আনার।
অধ্যাপক ড. বি এম মাইনুল হোসেন বলেন, উনি (বিদেশগামীরা) তো কেবল কাজ করবেন না, সন্তান কোন স্কুলে পড়বে, অসুস্থ হলে কোন হাসপাতালে যাবে, আইনি ঝামেলায় পড়লে সেটার সমাধান কী— এসব বিষয় সম্পর্কযুক্ত। এখনও আমাদের দেশে এসব বিষয়ের মান অতটা ভালো পর্যায়ে যায়নি। প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের দেশে ফেরার উৎসাহ দিতে হবে।
/এমএন
Leave a reply