৫টি আন্ডাররেটেড সিরিজ: দ্বিতীয় পর্ব

|

ছবি: গেটি ইমেজ।

আহাদুল ইসলাম

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সিরিজ দেখার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেরেই চলেছে। প্রতি বছর বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম নানান ধরনের সিরিজ বের হয়। কিন্তু সব সিরিজ দর্শকদের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কিছু সিরিজ ব্যাপকভাবে ব্যবসা সফল হয়। অপরদিকে, ভালো গল্প হওয়া সত্ত্বেও অনেক সিরিজই দর্শকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। তবে গল্প, অভিনয়, চিত্রনাট্য, অ্যাকশন সিকুয়েন্স, সেট ডিজাইন সব মিলিয়ে এমন অনেক সিরিজ আছে, যেগুলো সত্যিকারর্থে দর্শকদের মনোযোগ পাওয়ার আসল দাবিদার। আজ ৫টি আন্ডাররেটেড সিরিজ নিয়ে থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

১. গুড ওমেনস

‘গুড ওমেনস’ একটি ব্রিটিশ ফ্যান্টাসি কমেডি সিরিজ, যা নীল গাইমান ও টেরি প্র্যাচেটের ১৯৯০ সালের একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সিরিজটি অ্যামাজন স্টুডিও এবং বিবিসি স্টুডিওর যৌথ প্রযোজনায় তৈরি করা হয়েছে। সিরিজে মাইকেল শিন ও ডেভিড টেন্যান্টের মতো কিংবদন্তি অভিনেতা রয়েছেন। উপন্যাসের মতো, গুড ওমেনস ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত ভালো ও খারাপের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ দেখা যায়। মজার কথা হল, পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে স্বর্গ থেকে আসে দেবদূত আজিরাফেল। অপরদিকে, পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে নরক থেকে আসে দানব ক্রাউলি। দেবদূত ও দানবের মধ্যে চলে তুমুল সংঘর্ষ। সিরিজের সমস্ত পর্ব ৩১’শে মে, ২০১৯ সালে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে প্রকাশিত হয়েছিল। সিরিজ বিশ্লেষকদের মতে, গুড ওমেনসে গ্রাফিক্সের কাজ অসাধারন।

২. সি

সি একটি আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ যা অ্যাপেল টিভি প্লাস নির্মাণ করেছে। সিরিজে প্রধান ভূমিকায় আছেন জনপ্রিয় অভিনেতা জেসন মোমোয়া এবং আলফ্রে উডার্ড । সিরিজটি সুদূর ভবিষ্যতের একটি পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক ডিস্টোপিয়াতে সেট করা হয়েছে, যেখানে পৃথিবীর সব মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই দুটি যমজ-দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের জন্ম হয় জেসন মোমোয়ার ঘরে। তবে সবার থেকে লুকিয়ে রাখা হয় শিশুদের। নাহলে বাকি সবাই মিলে শিশুদের হত্যা করবে। যেহেতু, সিরিজে গল্পের মধ্যে সবাই অন্ধ, তাই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামটাও অনেক কষ্টের। পৃথিবীর গুঁটি কয়েক মানুষই বেঁচে আছে এবং তারা চোখে দেখেন না। কীভাবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে, মূলত তাই নিয়ে তৈরি এই নাটক। সেই সাথে জেসন মোমোয়ার চরিত্রকে ঘিরে রয়েছে ভয়াবহ অ্যাকশান। অন্ধ হয়ে কীভাবে যুদ্ধ করতে হয়, জেসন মোমোয়া সেই চরিত্রের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন দারুণ অভিনয় মধ্য দিয়ে।

৩. গামোরাহ

গামোরাহ একটি ইতালীয় ক্রাইম ড্রামা টেলিভিশন সিরিজটি রবার্তো স্যাভিয়ানো দ্বারা নির্মিত। নাটকটি স্যাভিয়ানোর বইয়ের উপর ভিত্তি করে সিরিজটি তৈরি করা হয়েছে। নাটকটি ইতালির স্কাই আটলান্টিক চ্যানেলে ২০১৪ সালে প্রিমিয়ার হয়েছিল। এরপর ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৫৮টি পর্বের পাঁচটি সিজনে চলেছিল।

নাটকটি মূলত ইতালির নেপলস শহরের স্ক্যাম্পিয়ার আশেপাশের মাফিয়া পরিবার এবং মাদক পাচার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নেপলস শহরের মাফিয়া ফামিলির প্রধান পিয়েটরো সাভাস্তানো। তার হাত ধরেই পুরো শহরে মাদক সরবরাহ করে পরিবারটি। সেই মাফিয়া গ্রুপের সদস্য সিরো ডি মারজিও। সিরোর তত্ত্বাবধানে চলে সব অপারেশান। কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যান পিয়েটরো সাভাস্তানো। তার যায়গায় ফামিলির প্রধান নিয়োগ করা হয় পিয়েটরোর ছেলে জেন্নারো সাভাস্তানো। ক্রমশই, জেন্নারো তার বাবার থেকে আরও ভয়ঙ্কর লিডার হয়ে উঠেন। মাদক পাচার এবং ইতালির নতুন প্রজন্মকে নেশার অন্ধকার জগতে ধাবিত করতে প্রধান হোতা এই জেন্নারো। তাকে থামাতে চলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান। অনেকের মতে, অরিজিনাল বইয়ের থেকে সিরিজটি আরও বেশি বাস্তব এবং রোমাঞ্চকর।

৪. জিরো জিরো জিরো

‘জিরো জিরো জিরো’ সিরিজটি নির্মাণ করেছেন স্টেফানো সোলিমা, লিওনার্দো ফাসোলি এবং মাউরিসিও কাটজ। এটিও একটি ইতালীয় ক্রাইম ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ। এটি রবার্তো সাভিয়ানোর একই নামের নন-ফিকশন বইয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বই ও সিরিজে গল্প একই রাখা হয়েছে। ভয়াবহ ড্রাগ কোকেনের ব্যবসা নিয়েই গল্প।

গল্প শুরু হয় মেক্সিকো থেকে ইতালিতে কোকেনের একটি বড় চালানের ঝামেলাপূর্ণ যাত্রা অনুসরণ করে। বিক্রেতারা হলেন মেক্সিকান ড্রাগ লর্ড এনরিক এবং জ্যাকিন্টো লেইরা। তারা মূলত দুর্নীতিবাজ সেনাবাহিনীর সৈন্যদের দ্বারা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। অপরদিকে, ক্রেতা ডন মিনু লা পিয়ানা, যার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী নাতি স্টেফানো এবং কার্টিগা পরিবার। দুই পক্ষের মধ্যে আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে জমে উঠে সিরিজটি।

৫. ব্লাডহাউন্ডস

সিরিজ তৈরিতে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্লাডহাউন্ডস একটি দক্ষিণ কোরিয়ান অ্যাকশান ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ। গল্প তৈরি করা হয়েছে ২০১৯ সালের কোভিড-১৯’র সময়কে কেন্দ্র করে। নাটকের মুখ্য চরিত্র কিম, যিনি একজন প্রাক্তন নৌ-বাহিনীর অফিসার। ২০১৯ সালে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে অর্থনৈতিক সংকটে পরে তার পরিবার। কিমের পরিবারে রয়েছে শুধুমাত্র তার মা, যিনি একটি কফির দোকানের মালিক। কিন্তু কোভিড-১৯’র কারণে খুব একটা গ্রাহক দোকানে আসে না। সংসার চালানো নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। এদিকে, কিম নৌ-বাহিনীর থেকে অবসর নেয়ার পর, শুধু মাকে সংসারে সাহায্য করার জন্য শুরু করেন বক্সিং। বক্সিং করে তিনি টাকা পয়সা জোগাড় করেন। একদিন, বক্সিং টুর্নামেন্টে ফাইট করার সময় হারিয়ে দেন প্রতিপক্ষ উু জিনকে। তারপরই, উু জিনের সাথে বন্ধুত্ব হয় কিমের। এদিকে, কিমের মা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ঋণ দেয়া প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়েন। প্রতিষ্ঠানটি কম সুদের বিনিময়ে লোণের প্রলোভন দেখিয়ে কিমের মাকে কাগজে স্বাক্ষর করাতে রাজি করায়। কিমের মা ভালোভাবে না পড়ে স্বাক্ষর করায় পড়েন ভয়াবহ বিপদে। এক মাসের মধ্যে সুদ বেড়ে যায় ৩ গুন। লোণ দেয়া প্রতিষ্ঠানে ফোন করলে, কিমের মাকে তারা জানায়, কাগজে লিখা ছিল সময়ের মধ্যে কিস্তি না দিতে পারলে ৩ গুন সুদ এবং দোকান নিয়ে যাবে তারা। পরবর্তীতে, কিমের মাকে ভয় দেখাতে ২০ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আসে লোণ কোম্পানির মালিক। মাকে বাঁচাতে ছুটে আসে কিম। শুরু হয় তুমুল মারামারি। ধীরে ধীরে, কিম জানতে পারে, লোণ কোম্পানিটি আসলে একজন মাফিয়া দ্বারা পরিচালিত। কিম শুরু করে তদন্ত। তদন্তে বেরিয়ে আসে, তার পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবারকে ধোঁকা দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে সর্বস্ব। লোণ কোম্পানিটির মুখোশ উন্মোচন করতে কিম এবং তার বন্ধু উু জিন শুরু করে যুদ্ধ। অনেকের মতে, ২০২৩ সালের অন্যতম অ্যাকশান সিরিজ এটি।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply