বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিলো আস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩৬৭ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইমাম-উল হক ও আব্দুল্লাহ শফিকের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৪ রান যোগ করলে ভালো সম্ভাবনার জানান দিচ্ছিল বাবরের দল। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেই আশায় গুড়ে বালি হয় পাকিস্তানের। শেষ দিকে অ্যাডাম জাম্পার স্পিন ঘূর্ণিতে ২৭ বল বাকি থাকতেই ৩০৫ রানে গুটিয়ে যায় বাবরের দল।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৬৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় পাকিস্তান। পাওয়ারপ্লেতে তারা দু’জনে মিলে যোগ ৫৯ রান। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পর রান তোলার গতি বাড়ান ইমাম-উল হক ও আব্দুল্লাহ শফিক। ফলে ১৬.৪ ওভারে শতরানে পৌঁছায় পাকিস্তান।
দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২য় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শফিক। আরেক ওপেনার ইমাম উল পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৫৪ বলে। হাফ সেঞ্চুরির পরও পাকিস্তানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই ওপেনার। তবে শফিককে ফিরিয়ে তাদের দু’জনের ১৩৪ রানের জুটি ভাঙেন মার্কাস স্টয়নিস। ডানহাতি এই পেসারের বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৬৪ রান করে।
৭০ রান করা ইমামকেও ফেরান স্টয়নিস। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি বাবর আজম। জাম্পার বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৮ রান করে। আরেক ব্যাটার সাউদ শাকিল সাজঘরে ফেরেন ৩০ রান করে। রিজওয়ান ও ইফতিখার আশা দেখালেও পাকিস্তানকে জেতাতে পারেননি। রিজওয়ান ৪৬ এবং ইফতিখার ২৬ রান করে ফিরলে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত তারা অল আউট হয় ৩০৫ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। এছাড়াও দুটি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও মার্কাস স্টয়নিস এবং ১টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড।
এর আগে, টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তুলেন অজি দুই ওপেনার ওয়ার্নার-মার্শ। বিধ্বংসী যুগলবন্দীতে চোখে সর্ষেফুল দেখছে পাকিস্তান। যে বোলিং নিয়ে তাদের এতো অহমিকা, তাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না অজি দুই ওপেনার। অবশ্য পঞ্চম ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নার ক্যাচ দিয়েছেন। তবে সহজ ওই ক্যাচের সঙ্গে মোমেন্টাম ফেলে দেন পাকিস্তানের একাদশে জায়গা পাওয়া লেগ স্পিনার উসামা মীর।
জীবন পেয়ে নিজের স্বভাবসূলভ ক্রিকেট খেলতে থাকেন তিনি। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়ে পাওয়ারপ্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮২ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন ওয়ার্নার। সমানতালে রান করা মার্শ পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৪০ বলে। এদিকে ২০.২ বলে দেড়শ রান পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। দুইশ রান করতে অজিদের খেলতে হয়েছে ২৯.২ ওভার। জীবন পাওয়ার পর থেকে দারুণ ব্যাটিং করা ওয়ার্নার ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮৫ বলে। পরের বলেই নওয়াজের বলকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে সমান ১০০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২য় সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্শ।
তবে সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মার্শ। শাহীন আফ্রিদির বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা উসামার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। পরের বলে আউট হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শাহীন আফ্রিদিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দেন এই মারকুটে ব্যাটার।
এদিকে ১১৬ বলে দেড়শ ছোঁয়া ওয়ার্নার, হারিস রউফকে উড়িয়ে মারতে আউট হন ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে। শেষ দিকে মার্কাস স্টয়নিস, জশ ইংলিশ, মার্নাশ ল্যাবুশেনরা সুবিধা করতে না পারায় ৩৬৭ রানে থামতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। পাকিস্তানের হয়ে একাই ৫ উইকেট নেন শাহীন আফ্রিদি। এছাড়াও হারিস রউফ শিকার করেন তিনটি উইকেট।
/আরআইএম
Leave a reply