বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে ভিরাট কোহলির বীরত্বে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। সেই সাথে টানা পাঁচ জয়ে সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে রোহিত শর্মার দল। আগে ব্যাট করতে নেমে ড্যারেল মিচেলের অনবদ্য সেঞ্চুরি ও রাচীন রবীন্দ্র’র হাফ সেঞ্চুরি’তে ২৭৩ রানের লড়াকু পুঁজি পায় কিউইরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত ও গিলের ব্যাটে ভালো শুরু পায় ভারত। তবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে মেন ইন ব্লু’রা। কিন্তু ভিরাট কোহলির অতিমানবীয় ৯৫ রানের ওপর ভর করে ১২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ভারত।
রোববার (২২ অক্টোবর) ধরমশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। বাহারি সব শটের পসরা সাজিয়ে দ্রুত রান তুলেন ভারতীয় অধিনায়ক। রোহিতকে ভালোই সঙ্গ দেন গিল। তাতে করে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৩ রান তোলেন এই দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন লকি ফার্গুসন।
ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন রোহিত। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকা ভারতের অধিনায়ক ফেরেন ৪৬ রানের ইনিংস খেলে। রোহিত ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গিলও। তরুণ এই ওপেনারকেও সাজঘরে পাঠান ফার্গুসন। ডানহাতি এই পেসারের বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে থাকা মিচেলের হাতে ধরা পড়েন। গিল ফেরেন ৩১ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে।
ক্রিজে এসেই শ্রেয়াস আইয়ার একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান ফার্গুসনকে। পৌঁছে যান মাত্র ৯ বলেই ২১ রানে! ১৫.৪ ওভারে ১০০ রান পূর্ণ করে ফেলে ভারত। তখনই তীব্র কুয়াশায় ধরমশালা ঘিরে ধরলে আম্পায়াররা খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। কিছুক্ষণ পর আবার খেলা শুরু হয়। স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকা আইয়ার কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান ৩৩ রান করে। বোল্টের বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে আইয়ার ফিরে গেলে কোহলির সঙ্গে রাহুল জুটি বাধেন। ক্রিজে এসে রাহুল স্বচ্ছন্দ্যে খেলে যান, তবে তাকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন মিচেল স্যান্টনার। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন রাহুল। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে ২৭ রান করা রাহুলকে ফেরায় কিউইরা। রাহুল ফেরার পর ৬০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি।
সুরিয়া কুমার যাদব প্রথমবারের মতো চলতি আসরে সুযোগ পেয়েও রান আউটে কাঁটা পড়েন। কোহলির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে ২ রানে ফিরে যান যখন, ১৯১ রানে ৫ম উইকেট হারায় ভারত। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতকে টানতে থাকেন কোহলি। ৪ ওভারে ১৯ রানের সমীকরণে গিয়ে বোল্টকে ছক্কার পর চার মেরে ম্যাচ একপক্ষেই এনে ফেলেন ‘চেজ মাস্টার’। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তেই চলে গিয়ে পরে ছক্কা মারতে গেলে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ১০৪ বলে ৯৫ রানের ইনিংসে দলকে জয়ের ৫ রান দূরত্বে রেখে যান। ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে জাদেজা দুই ওভার হাতে রেখে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ডেভন কনওয়েকে সাজঘরে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। ভারতীয় এ পেসারের গুড লেন্থের বল ফ্লিক করতে গিয়ে মিড উইকেটে শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে ধরা পড়েন কোনো রান না করা কনওয়ে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো শূন্য রানে ফিরতে হয় তাকে।
এরপর ইনিংসের নবম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ শামি। প্রথম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই উইল ইয়াংকে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। শামির গুড লেন্থের বল ইয়াংয়ের ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত হানলে ১৭ রানে ফিরতে হয় এই কিউই ওপেনারকে।
পাওয়ারপ্লে’তে মাত্র ৩৪ রান তোলা কিউই ব্যাটাররা এরপর নিজেদের খোলস থেকে বেড়িয়ে আসে। চলতি আসরের অন্যতম সেরা স্পিনার কুলদীপ যাদবের বলে রীতিমতো ঝড় তুলেন রবীন্দ্র ও মিচেল। ৫টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩য় ফিফটি তুলে নেন রবীন্দ্র। অন্যদিকে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৬০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি স্পর্শ করেন মিচেল।
তারা দু’জনই সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন। তবে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি রবীন্দ্র’র। শামির স্লোয়ার অফ কাটারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে থাকা গিলের হাতে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭৫ রানের ইনিংস তার থামে যখন, নিউজিল্যান্ড ৩৪তম ওভারে ১৭৮ রানে। আগের ওভারেই মিচেলেরও ক্যাচ উঠেছিল, কুলদীপের বলে সেবার লং অফে থাকা বুমরাহ সহজ ক্যাচ মিস দিলে ৬৯ রানে জীবন পান মিচেল।
ক্যাচ মিসের মাশুল পরে ভালোভাবেই দিতে হয় ভারতকে। মিচেল ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫ম শতক পেয়ে যান ১০০ বলে। ৩৭তম ওভারে ২০০ পেরিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড ওই ওভারেই হারিয়ে ফেলে উইকেট। টম ল্যাথামকে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে এক অঙ্কেই ফেরান কুলদীপ। নিজের শেষ ওভারে এসে গ্লেন ফিলিপসকেও ফিরিয়ে দেন কুলদীপ। ২৩ রানে ফিলিপসকে আউট করেন বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার।
শেষ দশ ওভারে ভারতীয় পেসারদের দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক বোলিংয়ে ভারত আটকে রাখে নিউজিল্যান্ডকে। উইকেটে সেট হওয়া মিচেলও উড়াল দিতে পারেননি। সেঞ্চুরির পর ২৭ বলে করেন ৩০ রান। শেষের দিকে টানা উইকেট হারিয়ে মিচেলের যোগ্য সঙ্গও হারিয়ে যায়। ২৪৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ১৭ রানেই আরও তিন উইকেট খুইয়ে ফেলে কিউরা। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নেন শামি, শেষ ওভারে এসে মিচেলকে আউট করলে শামি পেয়ে যান ফাইফার। ১২৭ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১৩০ রানে থেমে যায় মিচেলের ইনিংস। শেষ দশ ওভারে মাত্র ৫৪ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেয় ভারত। শেষমেশ নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় ২৭৩ রানেই।
ভারতের হয়ে পাঁচটি উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। দু’টি উইকেট শিকার করেন কুলদীপ যাদব। মোহাম্মাদ সিরাজ ও জাসপ্রিত বুমরাহ নেন একটি করে উইকেট।
/আরআইএম
Leave a reply