গঙ্গাসাগর দীঘি: রাজারবাগের যে জলাধার চারশ বছরের ঢাকার চেয়েও পুরোনো

|

গঙ্গাসাগর দীঘির এক পাশ।

মুনিম রাব্বী:

একটা সময় ছিল, যখন বিত্তশালীরা নিজের প্রতিপত্তি দেখাতে পুকুর বা দীঘি খনন করতেন। ঐতিহাসিক এমন দীঘির সংখ্যা ঢাকায় বিরল। তেমনই এক দীঘির অবস্থান ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা বাসাবোর রাজারবাগের বরদেশ্বরী কালীমন্দিরের পাশেই। নাম– গঙ্গাসাগর দীঘি।

দীঘিতে নৌকা চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

এই জলাধারের দিকে তাকালে ভেসে উঠবে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ষোড়শ শতকের শেষের দিকে বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁকে দমন করতে রাজা মান সিংহকে বাংলায় প্রেরণ করেন মুঘল সম্রাট আকবর। ঈশা খাঁর সাথে অন্তিম যুদ্ধের আগে মোঘল সেনাপতি এখানেই তাঁবু গেড়েছিলেন। খনন করেছিলেন দীঘিটি।

সুপ্রাচীন গঙ্গাসাগর দীঘি।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ঈশা খাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যখন রাজা মান সিংহকে পাঠানো হয়, তখন তিনি যাত্রাবাড়ীর দিকে এসে পানীয় জলের অভাব বোধ করলেন। ভারত তীর্থের জল দ্বারা পুতপবিত্র করে তিনি এর নামকরণ করেন ‘গঙ্গাসাগর দীঘি’।

একই সময়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পাশেই রাজা মান সিংহ স্থাপন করেন কালী মন্দির। মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে এখনও টিকে আছে মন্দিরটি। বরদেশ্বরী কালী মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মন্দির ঘিরেই। পুরোহিত গোপাল চক্রবর্তী বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, এলাকায় জনবসতি কম ছিল। রাজারবাগ, দক্ষিণ গাঁও, মেরাদিয়া, নন্দিপাড়া– এসব এলাকা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। মান্ডা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসলমানরা এখানে এসে জমি কিনে বাড়িঘর করে। আগে থেকেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ছিল, এখনও তাই আছে।

পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে দীঘিটিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু মন্দির ও স্থাপনা। সাড়ে চার একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই জলাধারে পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর এখানে আসেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দারাও নিয়মিত ব্যবহার করেন এখানকার পানি। ঐতিহাসিক স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে গঙ্গাসাগর দীঘির চারপাশ ঘিরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা মন্দির কর্তৃপক্ষের।

এ প্রসঙ্গে লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, দীঘির পাড়টাকে বেঁধে ওয়াকওয়ে তৈরি করে দিলে এটি আরও দর্শনীয় হবে এবং মানুষজনও উপকৃত হবে। সকালবেলা সেখানে তারা হাঁটতে পারবে বলে জানান তিনি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দীঘির পানি যেমন পবিত্র, সাধারণ নগরবাসীর কাছেও তেমন প্রশান্তির। সুবিস্তৃত ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে ঐতিহাসিক অনেক কিছুই হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু ইতিহাস, ধর্ম আর দুষ্প্রাপ্যতার নিরিখে গঙ্গাসাগর দীঘির অবস্থান থাকবে অনন্য এক উচ্চতায়।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply