কক্সবাজার করেসপন্ডেন্ট:
ঘূর্ণিঝড় হামুনের কয়েক ঘণ্টার আঘাতে ‘অচল’ হয়ে পড়া কক্সবাজারে এখনও বিদ্যুৎব্যবস্থা পুরোপুরি সচল হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জেলার ৩০ শতাংশ জায়গা এখনও বিদ্যুৎহীন। এরমধ্যে মহেশখালী ও চকরিয়ার কিছু অংশে বিদ্যুৎ নেই।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি জানিয়েছেন, জেলায় বিদ্যুৎব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে গেছে। অন্তত ৮০০টি স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে।
গতকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিদ্যুৎ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে প্রায় ৭০০ জন লাইন-ক্রু ১৬৩ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া নিয়মিত লোকবল ও ঠিকাদারদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ও চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ থেকে অতিরিক্ত লোকবল ও ঠিকাদারকে কক্সবাজার জেলায় পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহিন ইমরান জানান, হামুনের আঘাতে কক্সবাজারের সব ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসঙ্গে কক্সবাজার ও মহেশখালী পৌরসভাও ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭৪৯। জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি আরও বলেন, অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক তার রাস্তাঘাট ও বসতিতে পড়ে রয়েছে। এখন হঠাৎ করে বিদ্যুতের সংযোগ দিলে প্রাণহানি ঘটতে পারে। সেজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, মোবাইল নেটওয়ার্কও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়। মূলত যোগাযোগববস্থা ভেঙে পড়ায় ক্ষয়ক্ষতির স্পষ্ট চিত্র উঠে আসতে সময়ে লেগেছে।
গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন। এতে অসংখ্যা গাছপালা উপড়ে পড়ে চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টা। এছাড়া মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বেশিরভাগ জায়গায় ঝড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে। পেকুয়া-চকরিয়ার কিছু অংশেও বেশ তাণ্ডব চালায় এই ঘূর্ণিঝড়।
স্থানীয়রা বলছেন, ’৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর তারা এমন ঝড়ো বাতাস দেখেননি। ঝড়ো বাতাসে ফসলের ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে মহেশখালীতে বেশিরভাগ পানের বরজ ভেঙে পড়েছে। এতে কৃষকেরাও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।
হামুনের আঘাতের পর ধ্বংসস্তুপ সরাতে এসব এলাকায় শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া, বেশি শ্রমিকরা বেশি পারিশ্রমিক দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের জন্য এ সময় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন তিনি।
এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রশাসনের হিসাব মতে, কক্সবাজারে প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন। এরমধ্যে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে দেয়াল চাপায় মোহাম্মদ আব্দুল খালেক (৪০) নামের এক মাছ ব্যবসায়ী মারা যান। গাছ চাপা পড়ে চকরিয়ার বদরখালী ইউনিয়নে আসকর আলী (৫০) নামে আরেক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। মহেশখালীতেও গাছ চাপায় আর হারাধন দে নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আর হতাহতের সংখ্যা শতাধিক।
/এমএন
Leave a reply