ইসরায়েলি বর্বরতায় মারা গেছে স্ত্রী আর চার সন্তান। হতভাগ্য এক বাবার বোধগম্য হচ্ছে না, তার মাত্র আড়াই মাস বয়সী শিশুটির কী অপরাধ ছিল? আরেক সন্তানের বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত ছিল। কয়েকদিন পর যে মেয়ের বিয়ের শাড়ি পরার কথা, তার গায়ে কাফনের কাপড়। গাজার সেই বাসিন্দা বলেন, আমার এই আড়াই মাসের বাচ্চার অপরাধ কী? সে কি নেতানিয়াহুকে হত্যা করতে চেয়েছে? কাউকে আঘাত করেছে, নাকি জিম্মি করেছে? আমার মেয়েটার কয়েকদিন আগে বাগদান হয়েছিলো।
বাড়িঘর এখন ধ্বংসস্তূপ। সব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও এই ব্যক্তি নিজের জমি ছেড়ে যাননি। নিজ চোখেই ‘নাকবা’ দেখেছেন। দেখেছেন, কীভাবে তার বাবা-মাকে তাড়িয়ে জমি দখল করে নিয়েছিল ইসরায়েলিরা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মরে যাবেন তবুও ভূমি ছাড়বেন না। তিনি বলেন, আমার ওপর ট্যাংক চালালেও আমি এখান থেকে যাবো না। ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানেই তাবু বানিয়ে থাকছি। আমার বাবা-মায়ের সাথে যা হয়েছে, আমার সাথেও একই ঘটনা ঘটতে দেবো না।
আদরের সন্তানের জানাজা হচ্ছে, দূর থেকেই তা দেখে চোখের পানি ফেলছেন গাজার এক মা। যেভাবে তেল আবিবের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে শিশুরা, গাজার প্রতিটা ঘরেই যেন এখন কান পাতলে শোনা যায় সন্তান হারানোর আর্তনাদ। আপনজন, বাড়িঘর সব হারিয়ে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়, তবুও নিজের ভূমি ছাড়ছেন না অনেক ফিলিস্তিনি।
গাজার আরেক বাসিন্দা হাসান আবু নাজিব বলেন, এক বছরের একটা শিশু কীভাবে সন্ত্রাসী হয়? বাবা ডাক শেখার আগেই গাজার শিশুদের শহীদ হতে হচ্ছে। আমরা জানি, এটাই আমাদের ভাগ্য। এসব সহ্য করার ধৈর্য্য ও শক্তি আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।
অবরুদ্ধ গাজায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম। হামলায় আহত হাজার হাজার শিশুও এখন কাতরাচ্ছে অসহ্য যন্ত্রণায়। এরইমধ্যে ওষুধ-চিকিৎসার অভাবে মারাও গেছে অনেকে।
আওয়াদ আবু শামালেহ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার ভাই-ভাবি আগেই মারা গিয়েছিলো। তাদের শিশু সন্তান দু’সপ্তাহ ধরে ছিলো হাসপাতালে ভর্তি। ওরা সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এখানে কোনো ওষুধ নেই, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, জ্বালানি নেই। ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারলো না।
এমন পরিস্থিতিতে নারী-শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে রাফা ক্রসিং দিয়ে চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রতিদিন অন্তত ১০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
/এএম
Leave a reply